লাইটিং বা আলোকসজ্জা ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনে সবচাইতে অপরিহার্য একটি ব্যাপার। কেননা, আলো একদিকে যেমন ঘরকে উজ্জ্বল রাখে, তেমনই ঘরকে করে তোলে আরামদায়ক। এছাড়াও, আলোর কারণে ঘরের পরিবেশ বা আবহাওয়ার মধ্যেও ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়। আধুনিক যুগের আলোকসজ্জার কারণে ঘরের সবকিছুর উপস্থিতি - আসবাবপত্র, মেঝে, সিলিং, কারুকাজ ইত্যাদি উন্নত করে ইন্টেরিয়রকে ফুটিয়ে তোলে। সঠিক আলো ছাড়া স্থাপত্যশৈলী, শিল্পকর্ম এবং ফোকাল পয়েন্টই সবই রয়ে যায় অগোচরে। কিন্তু যখন লাইটিং ঠিকঠাক থাকে তখন সঙ্গীতের মতোই সুর, তাল, লয় এবং ছন্দের এক অপূর্ব মেলবন্ধন নজরে পড়ে। আর আজকের আয়োজনের পুরোটা জুড়েই থাকছে ঘরে সিলিং লাইটের ব্যবহার নিয়ে।
সাধারণত লাইটিং তিন ধরণের:
জেনারেল লাইটিং বা সাধারণ লাইটিং বলেও পরিচিত যা মূলত ঘরের প্রাথমিক আলোর উৎস। এই ধরণের লাইটিং মূলত চোখে আরামদায়ক একটা ভাব দেয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন -
টাস্ক লাইটিং হচ্ছে নির্দিষ্ট জায়গার ফোকাস করা লাইটিং; যা যে কোনো নির্দিষ্ট স্পট বা কাজকে ফোকাস করে আরো বেশি এবং অ্যামবিয়েন্ট লাইটিংয়ের বিপরীত যা জায়গাটিকে আরো আলোকিত করে তোলে। যেমন -
অ্যাকসেন্ট লাইটিং হচ্ছে বিশেষ কোন কিছুর উপর অতিরিক্ত দৃষ্টিপাত ও আকর্ষণ তৈরি করা। সাধারণত পেইন্টিং, ভাষ্কর্য, বা বিশেষ কোন স্যুভেনিয়রকে হাইলাইট করার জন্য লাইটিং করা। যেমন -
শুধু কি লাইটিংয়ের ধরন জানলেই হবে? নাহ। বরং জানতে হবে ঠিক কোথায় এবং বিশেষ করে কোন ঘরে বা কোন কাজের জন্য ঠিক কোন ধরণের লাইটিং আপনার প্রয়োজন পড়বে।
লিভিং রুমে আয়েশ করে বসার মানে কি যদি সেটা অন্ধকারেই ডুবে থাকে? যদি কোন আর্টওয়ার্ক প্রদর্শন করতে চান অথবা মেঝে কিংবা সিলিং জুড়ে আলোর কারুকাজ ফুটিয়ে তুলতে চাইলে আলোর কোন বিকল্প নেই। আর সাধারণত লিভিং রুমে বসেই সবাই আড্ডায় মশগুল হয়ে উঠে তাই এখানে আলোর ব্যাপকতা থাকলে রুচিশীলের পরিচয় মেলে। তাই আপনার ঘরে নীচের লাইটিংগুলো থাকা উচিত।
ঝাড়বাতি লিভিং রুমের জন্য একদম পারফেক্ট বিশেষ করে যদি আপনার উঁচু সিলিং থাকে কিংবা আপনি ঝাড়বাতির মোহময় আলোতে ঘরকে আলোকিত করতে চান। ঘরের ফোকাল পয়েন্ট কিংবা ঘর সাজানোর বিকল্প আইটেম হিসেবে এটি দারুণ জনপ্রিয়। তবে ঝাড়বাতি শুধুই বিলাসবহুল কিংবা বিশালাকারের বাড়িতেই শোভা পায় এমন ধারণা গত হয়েছে, কারণ এখন ঝাড়বাতি বিভিন্ন আকারে আসে। ঝাড়বাতি সমানভাবে ঘরের সর্বত্র আলো ছড়াতে পারে। আর বসার ঘরে রাজকীয় ভাব আনে।
ফ্লোর ল্যাম্পস হচ্ছে লিভিং রুমের জন্য আরেকটি বিকল্প কারণ এটি পুরো রুমকে আলোকিত করতে পারে কিংবা একটি নির্দিষ্ট জায়গাকে আলোকিত করতে পারে। লিভিং রুমের চেহারাই পালটে দিতে পারে ফ্লোর ল্যাম্পস। পাশাপাশি ঘরে একটি ক্ল্যাসিক লুক আনতে সাহায্য করে।
বলতে গেলে এই ট্রেন্ডটা একদমই নতুন বলা চলে। যেখানে সিলিং ফ্যানের সাথে একটি লাইট জুড়ে দেয়া হয়। আর এই বাল্বগুলোও বিশেষভাবে তৈরি করা হয় যেন ফ্যানের মোটরের ভাইব্রেশন কন্ট্রোল করতে পারে। ফ্যান লাইট ঘরের উজ্জ্বলতাকে আরো বাড়াতে সাহায্য করে।
লিভিং রুমে স্পেশাল কিছু হতে পারে পেনড্যান্ট লাইট। চেয়ার, সোফা কিংবা অন্য যে কোনো আসবাবপত্রের উপর এই ধরণের লাইট সিলিং থেকে ঝুলে থাকে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট জায়গাকে অর্থবহ করে তোলার ক্ষেত্রে পেনড্যান্ট লাইটের জুড়ি মেলা ভার। পাশাপাশি এটি টাস্ক লাইটের কাজও করে থাকে।
লিভিং রুমকে ঘরোয়া এবং উষ্ণ অভ্যর্থনাময় জায়গা বানাতে চাইলে অবশ্যই ওয়াল লাইট দরকার। কিছু বাড়িঘর ঝাড়বাতি ঝুলানোর উপযুক্ত নাও হতে পারে। আবার, সিলিং যদি অনেক উঁচুতে হয় তাহলে পেনড্যান্ট লাইটের কর্ড বা কেবল সৌন্দর্য্যকে হার মানাবে। তাই, বিকল্প হিসেবে আছে ওয়াল লাইট। দুই পাশের দেয়ালেই যখন ওয়াল লাইট মিটমিটে আলো জ্বলে তখন লিভিং রুমের পরিবেশটাই পালটে যায়।
যেহেতু বেডরুম শুধুমাত্র ঘুমানোর জন্যই ব্যবহার করা হয় তাই অনেকেই ভেবে থাকে যে, এই ঘরে খুব বেশি লাইটিংয়ের কোন দরকার নেই। কিন্তু যখন আপনি শুয়ে শুয়ে বই পড়া কিংবা রিলাক্সে কাজ করার কথা ভাববেন তখন কিন্তু আপনার নির্দিষ্ট আলোর প্রয়োজন পড়বে। বেডরুমে যে ধরণের আলো কাজে আসবে -
একটি টেবিল ল্যাম্প যে কোনো বেডরুমের জন্য একটি নিখুঁত আলোর সমাধান। কারণ, এগুলো বিভিন্ন সাইজ ও শেইপে আসে যা আপনার বিছানাতে ফিট হবার উপযুক্ত। এছাড়াও, বেডসাইড টেবিলেও টেবিল ল্যাম্প দারুণভাবেই মানিয়ে যায়।
বেডরুমের মেঝেতে যদি পর্যাপ্ত জায়গা থাকে, তাহলে বড় ফ্লোর ল্যাম্প লাগানোটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তবে অবশ্যই বেডরুমের ডেকোরেশনের সঙ্গে মিলে এমন ফ্লোর ল্যাম্পই বাছাই করবেন। কারণ, আপনি যথেষ্ট সতর্ক না হলে ফ্লোর ল্যাম্পই ফোকাল পয়েন্ট হয়ে যেতে পারে ঘরের। তাই এমন কোন ফ্লোর ল্যাম্পের ডিজাইন বাছাই করুন যেন আপনার ঘরের সাজসজ্জা পরিবর্তন হলেও যেন তা বেমানান না লাগে।
যদি আপনার বেডরুম খুব আঁটসাঁট হয় এবং ফ্লোর বা টেবিল ল্যাম্প তেমন সুবিধা না করতে পারে তাহলে স্কোনস লাইট সেক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে দারুণ কার্যকর। কেননা, স্কোনস লাইটিং জায়গা বাঁচায় এবং বেডরুমে মার্জিত একটা ভাব ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
এই ধরণের লাইটিং ব্যবহার করা হয় বেডরুমকে উষ্ণ ও আরামদায়ক করে তোলার জন্য। এই ধরণের লাইট ইনস্টল করা একটু কঠিন তবে সঠিকভাবে করতে পারলে পর্যাপ্ত এবং সূক্ষ্ম আলো দেয়। সাথে ডিমার ফিক্সড থাকলে খুব সহজেই আলোর পরিমিতি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
ডাইনিং রুমে ভালো আলো অত্যাবশ্যক কেননা এখানে সন্ধ্যায় পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধব মিলিত হয়। আবার, ডাইনিং টেবিল শুধুমাত্র খাবারদাবারের জন্য না, বরং আমাদের উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে বাচ্চারা যেমন এখানে বসে হোমওয়ার্ক করে, তেমনি বড়রা এমনিতেই বসে আড্ডা দেয়। তাই, উষ্ণ ও আরামদায়ক আলো একান্ত কাম্য।
ডাইনিংয়ে ঝাড়বাতি লাগালে বিশাল একটা জায়গা জুড়ে আলো প্রভাব বিস্তার করতে পারে। মার্কেটে নানান ধরণের ঝাড়বাতি পাওয়া যায় যা ডাইনিংয়ের জায়গা এবং ডিজাইন অনুসারে লাগানো যেতে পারে।
পেনড্যান্ট লাইট অতি উজ্জ্বল এবং বেশি জায়গাও নেয় না। তাই, ডাইনিংয়ে পেনড্যান্ট লাইট আদর্শ হতে পারে। আলোকিত করার জন্য দুটি পেনড্যান্ট লাইটই যথেষ্ট। তবে পেনড্যান্ট যেন অবশ্যই ডাইনিং টেবিলের বরাবর উপরেই থাকে।
ডাইনিং রুমের জন্য একদম নিখুঁত লাইটিং হচ্ছে কোভ লাইট। এক্ষেত্রে একাধিক লাইট দেয়ালে খাঁজ কেটে বসানো হয়; যা নরম ও মৃদু আলো দেয় ঘরজুড়ে এবং ঘরের সূক্ষ্ম সব গভীরতাকে ফুটিয়ে তোলে।
সকালের নাস্তাটা যেমন পারফেক্ট চাই তেমনই রান্নাঘরের লাইটিং টা চাই একদম নিখুঁত। রান্নাঘর শুধুমাত্র রান্নার জায়গায়ই নয় বরং প্রশস্ত ও সুন্দর রান্নাঘর মনোরম পরিবেশ দিতেও সক্ষম। তাই, আপনার রান্নাঘরের প্রতিটি কোণায় যেন পর্যাপ্ত আলো থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ক্যাবিনেট যদি হয় অন্ধকার তাহলে সঠিক জিনিসটি খুঁজে অনেক কষ্টকর। প্রতিটা ক্যাবিনেট শেলফের নীচে একটা করে লাইটই যথেষ্ট। এতে করে খুব সহজেই শেলফের প্রতিটা কোণেই আপনার দৃষ্টি দিতে সুবিধা হবে।
আপনার রান্নাঘরের সিলিং যদি অনেক উঁচুতে হয় তাহলে অবশ্যই স্পটলাইট একটি ভালো সল্যুশন হতে পারে। স্পটলাইটের কারণে নির্দিষ্ট জায়গা যেমন আলোকিত করা যায় তেমনই অন্ধকার জায়গাগুলো থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
সব ধরণের আলোর জন্য ডিমার ব্যবহার করুন। এতে করে উজ্জ্বলতা সামঞ্জস্য করা খুবই সহজ হয়ে যাবে।
প্রাকৃতিক আলোর বিকল্প কিছু হতেই পারে না। উপরন্তু এটি পরিবেশকে উষ্ণ ও আরামদায়ক করে তোলে।
অনেকেই বাথরুমে লাইটিং করার পক্ষে নয়। কিন্তু রিফ্রেশমেন্টের জন্য শাওয়ারের পাশাপাশি চাই ভালো আলোক ব্যবস্থা। তবে বাথরুমের জায়গা সাধারণত কম হওয়াও লাইটিংয়ের সুব্যবস্থা করা হয় না। কিন্তু আধুনিক কালের বাথরুমগুলো হয় বেশ বড়, প্রশস্ত এবং বিলাসবহুল।
ভ্যানিটি লাইটগুলো সাধারণত উপেক্ষা করা হয় কিন্তু সাজগোজের ক্ষেত্রে এর চাইতে পারফেক্ট আর কিছু হতে পারে না। শেভিং, মেকআপ এবং ডেইলি স্কিনকেয়ার রুটিনের জন্য একটি ভালো লাইটিং সমৃদ্ধ বাথরুম অবশ্যই কাম্য।
ফেন্সি ডেকোরেশন যাদের পছন্দ তাদের জন্য মিরর লাইট একদম পারফেক্ট। রেডিম্যাড বাথরুম মিরর লাইট কেনা যেতে পারে আবার কিনে এনে লাইটেও লাগিয়ে নেয়া যেতে পারে।