ঘর বা বাসস্থান। যে স্থান আমাদের খুব আপন এবং শান্তির জায়গা! এই ঘরকে সুন্দর করে তৈরি করতে এবং নিজেদের এবং অতিথিদের কাছে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে আমরা কতো কিছুই না করে থাকি। ঘরের জন্য পর্দা কিনতে গিয়ে সবচেয়ে সুন্দর পর্দাগুলোই আমরা বেছে নিয়ে আসি কিন্তু অনেক সময়ই আমাদের জানার অভাবে দেখা যায় মার্কেট থেকে পর্দা কিনে আনার পর ঘরের সাথে আর মানানসই হয়না। আচ্ছা! আপনি জানেন কি? গৃহসজ্জায় সঠিক পর্দা নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তাই আপানার ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে পর্দা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে কিছু বিষয়। কিছু প্রয়োজনীয় টিপস আপনাদের সাথে শেয়ার করব আজকের এই ফিচারেই।
আপানার ঘরকে আকর্ষণীয় করে তুলতে নিচের টিপসগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
পর্দা কিনতে গেলেই শুরুতেই যে বিষয়টি খেয়াল রাখবেন তা হচ্ছে পর্দার ফেব্রিক এবং পাল্লা/ লাইনিং। মার্কেটে বিভিন্ন ফেব্রিকের পর্দা পাওয়া যায়। লেইসের তৈরি জাঁকজমক পর্দার পাশাপাশি হালকা ওজনের সুতি কাপড়ের পর্দা এমনকি ভারি মখমলের পর্দাও পাবেন। এছাড়াও পাল্লা বা লাইনিং এর ক্ষেত্রে সিঙ্গেল এবং ডাবল লাইনিং এর পর্দা পাবেন। তবে যে পর্দাই কিনুন না কেন কেনার সময় সবসময় তিনটি বিষয় খেয়াল রাখবেন।
সেগুলো হচ্ছে-
পর্দার মধ্যে দিয়ে ঘরের ভেতর ঠিকঠাকভাবে সূর্যের আলো প্রবেশ করছে কিনা কিংবা আপনি যতটুকু আলো প্রবেশ করাতে চাচ্ছেন তা পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করছে কিনা।
আপানার রুমের ডেকোরেশন অনুযায়ী পর্দাটির ফেব্রিক মানানসই কিনা। যেমনঃ আপনি যদি শোবার ঘরের জন্য পর্দা কিনেন সেক্ষেত্রে হালকা ফেব্রিকের পর্দা বেছে নিন। আর আপনি যদি ড্রইংরুমের জন্য পর্দা কিনতে চান সেক্ষেত্রে একটু ভারি মখমলের পর্দা বেছে নিন।
আপনি আপনার ঘরে কতটুকু আলো প্রবেশ করাতে চাচ্ছেন পাশাপাশি কতটুকু গোপনীয়তা রক্ষা করতে চাচ্ছেন তা পর্দার ফেব্রিকের পাশাপাশি পর্দায় কতটি পাল্লা বা লাইন আছে তার উপর নির্ভর করে। সরাসরি সূর্যের আলো আসে এমন জানালার পর্দাগুলিতে সিঙ্গেল লাইনিং পর্দা লাগালে পর্দার রঙ সহজে নষ্ট হবে না এবং দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে। তবে, লাইনিংয়ের কারণে পর্দা যে একটু ভারি হবে সেটা মাথায় রাখুন। তাই এ বিষয়ে খুব ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
মনে রাখবেন, ভিন্ন ভিন্ন ফেব্রিকের পর্দা এবং লাইনিং আপনার রুমের লুককে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রেজেন্ট করবে।
পর্দা কীভাবে এবং কত দিন পর পর পরিষ্কার করা জরুরি তা পর্দার ফেব্রিকের উপর নির্ভর করে। তবে ঘরে ধুলাবালি কম প্রবেশ করলে যেকোনো ফেব্রিকের তৈরি পর্দাই প্রতি ৩-৬ মাস পর পর একবার করে ওয়াশ করে নিতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু ফেব্রিক আছে যেগুলোর তৈরি পর্দার আলাদা যত্ন নিতে হয়।
আপনি যদি-
পর্দা ঘন ঘন ওয়াশ করতে না চান তাহলে সুতি অথবা সিনথেটিক কাপড়ের পর্দা নির্বাচন করুন। এই ফেব্রিকের তৈরি পর্দাগুলি সহজে ওয়াশিং মেশিনেও ধোয়া যায়। এছাড়াও পরিবারের কোনো সদস্যের ডাস্ট অ্যালার্জি থাকলে, ঘরে ছোট বাচ্চা কিংবা পোষা প্রাণী থাকলে এইধনের ফেব্রিকের পর্দা আপনার জন্য বেস্ট অপশন।
কুঁচিওয়ালা পর্দা লাগাতে চান তাহলে সেটি যে ফেব্রিকেরই হোক না কেন, সবসময় ড্রাইওয়াশ করতে হবে। সিল্কের স্বচ্ছ কাপড়, উল বা পশমি কাপড়ের পর্দা অবশ্যই ড্রাইক্লিনিং করতে হবে। তবে ড্রাইক্লিন করলে কালার এবং শেইপ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে তাই, এধরনের পর্দার কালার এবং শেইপ যাতে বজায় থাকে সেজন্য ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
এছাড়াও পরিবারের সদস্যদের ডাস্ট অ্যালার্জি থাকলে সপ্তাহে একবার পর্দা ধোয়া উচিত।
পর্দা কিনতে গেলে ফেব্রিকের পাশাপাশি রং এবং ডিজাইনের প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন। আপনি লাইট নাকি ডিপ কালারের পর্দা চাচ্ছেন, প্রিন্টেড নাকি সলিড ডিজাইনের পর্দা চাচ্ছেন তা ভালো করে ভেবে নিন। দেয়াল এবং আসবাব পত্রের রঙের সাথে মিলিয়ে পর্দার রং নির্বাচন করুন। দেয়াল রং এবং পর্দার রং কখনোই যাতে একই না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ড্রইংরুমের জন্য হালকা রঙের পাতলা পর্দাই হবে মানানসই। এক্ষেত্রে সাদা, হালকা নীল কিংবা অফ হোয়াইট রঙের সিনথেটিক কাপড়ের পর্দা বেছে নেওয়া যেতে পারে। এতে করে আলো ও বাতাস বেশি চলাচল করতে পারবে।
আসবাবপত্রের রঙের সাথে কন্ট্রাস্ট হবে এরকম রং নির্বাচন করতে হবে।
এছাড়াও আপনি সলিড নাকি প্রিন্টেড পর্দা কিনবেন কিনা তা নির্ধারণ করতেও ঘরের আসবাব এবং অন্যান্য ডেকোরেশন ভালোভাবে দেখতে হবে। যদি রুমের ডেকোরেশন এবং আসবাবপত্র হালকা এক রঙের হয় সেখত্রে প্রিন্টেড এবং একটু রঙিন পর্দা ব্যবহার করুন।
আপনি যদি চান থিয়েটারের স্টেজের পর্দার মত আপনার ঘরের পর্দাও যদি ফ্লোর স্পর্শ করুক, তাহলে একটু লম্বা পর্দা (Curtain length) কিনুন। তবে আপনার ঘরে ছোট বাচ্চা থাকলে ফ্লোর টাচ পর্দা ব্যবহার করবেন না। এতে করে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা থাকে। তাই আদর্শ দৈর্ঘ্য হচ্ছে ফ্লোর থেকে কয়েক ইঞ্চি উঁচুতে পর্দার শেষপ্রান্ত রাখা।
জানালার ফলক বা দরজার ছাঁচের প্রস্থের উপর পর্দার আদর্শ প্রস্থ নির্ভর করে। এক্ষেত্রে পরিমাপের উপায় হচ্ছে ফ্রেমটি পরিমাপ করা এবং জানালার সমান রড (Hanging rods with the same width in window) ফ্রেমে স্থাপন করা। ফ্রেমের দৈর্ঘ্যকে ২ বা ২.৫ দিয়ে গুন করলে পর্দার আদর্শ প্রস্থ পেয়ে যাবেন।
ধরুন, উপরের সবগুলো পয়েন্ট মেনে আপনি দোকান কিংবা অনলাইন শপ থেকে পর্দা কিনেছেন। কিন্তু পর্দা লাগানোর পর দেখতে আর সুন্দর লাগছে না কারন পর্দার রডটি সঠিক উচ্ছতায় স্থাপন করা হয়নি। তাই পর্দার রডের দৈর্ঘ্য মাপার পাশাপাশি আরও একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সেটি হলো রড খুব উঁচু কিংবা বেশি নিচুতে (Placing curtain rod too low) স্থাপন করবেন না। রড যদি খুব উঁচুতে স্থাপন করেন, পর্দা তাহলে বেশ উঁচুতে উঠে যাবে। আবার বেশি নিচুতে স্থাপন করলে পর্দা ফ্লোরে গড়াগড়ি খাবে, যা দেখতে ভীষণ বেমানান লাগবে। তাই সঠিকভাবে মাপ নিয়ে একটি আদর্শ উচ্চতায় পর্দার রড স্থাপন করুন।
সকল রুমে পর্দার রডের উচ্চতা একই রাখুন। এক্ষেত্রে রড স্থাপনের পূর্বে মাপ নিয়ে যে স্থানে রড স্থাপন করবেন সেখানে শক্ত কাগজের টেম্পলেট লাগিয়ে মার্ক করে রাখতে পারেন, তাহলে ভুলভাবে রড স্থাপনের সম্ভাবনা থাকবে না।
আপনি দোকান থেকে পর্দা কিনে আনলেন, এনে দেখলেন পর্দার ভাঁজ গুলো নষ্ট হয়ে উল্টাপাল্টা কুঁচকিয়ে আছে। আপনি হাত দিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করলেও ঠিক হচ্ছে না। এরকম পর্দা (Hanging wrinkled curtain) জানালা বা দরজায় লাগালে সুন্দর দেখাবে না।
৩ টি উপায় পর্দার কুঁচকানোভাব দূর করতে পারেন-
পর্দা হচ্ছে গৃহের আব্রু। আপানার অন্দরের সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে যদি সঠিক পর্দা নির্বাচন করতে পাবেন। আশা করছি আজকের এই টিপসগুলো আপনাদের ঘরের পর্দা কিনতে কাজে দিবে। আপনার ভবিষ্যত প্রজন্মকে সবুজের ছায়াঘেরা পরিবেশে বেড়ে উঠতে দেখতে চান কিংবা রাজধানীর অন্যতম অভিজাত এলাকায় নিজের একটি ছিমছাম ফ্ল্যাট পেতে চান? অথবা আপনার বাড়ি বিক্রি করতে চান? আপানার জন্যই আছে ফ্লাগ বাংলাদেশ। এছাড়াও আপনার পুরোনো কিংবা নতুন ঘরকে রাঙ্গিয়ে তুলতে ফ্লাগ বাংলাদেশ (https://www.flagbangladesh.com) আপনার সাথে আছে সবসময়।