রাজপ্রাসাদ, বাংলো কিংবা একটা অ্যাপার্টমেন্টই সুন্দর করে তৈরি করেন না কেন; সেটা যদি বসবাস উপযোগী না হয় তাহলে লাভ কি? যে কোন স্থানকে বসবাসের উপযোগী করাটাও চাট্টিখানি কথা না। তবে কেবল ঘর নির্মাণ করলেই কিন্তু তা বসবাসের উপযোগী হয়ে যায় না। বরং আরো কিছু খুঁটিনাটি অথচ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার থাকে, যেগুলোতে দৃষ্টিপাত করা অত্যন্ত জরুরী। আর আধুনিক মিনিমাল ও সিম্পল লাইফের জীবনে এই খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলোই সবচাইতে বেশি নজরে পড়ে। আর এটাকেই মূলত ইন্টেরিয়র ডিজাইন বলা হয়ে থাকে। ইন্টেরিয়র ডিজাইনকে বাংলায় বললে বুঝায় আভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা। মূলত ঘরের পরিধির মধ্যে পরিমিত সাজসজ্জাকেই ইন্টেরিয়র ডিজাইন বলা হয়ে থাকে। আর ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সবচাইতে বেশি আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে লাইটিং। অর্থাৎ পরিমিত আলো আপনার ঘরকে দিতে পারে এক সুন্দর পরিবেশ আর আপনাকে দেবে আলাদা এক প্রশান্তি। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে লাইটিং মানেই বেশি ওয়াটের একটা এলইডি বাল্ব লাগিয়ে রাখা। অথবা খুব বেশি হলে একটা ঝাড়বাতির ব্যবস্থা করা। কিন্তু পরিমিত লাইট আপনার ঘরকেই শুধু শোভিত করবে না; বরং মনে দেয় এক শুভ্র ও প্রশান্তিময় ভাব।
ইন্টেরিয়র লাইটেনিং ডিজাইন পুরো ঘরের এমনকি বাড়ির পরিবেশও বদলে দিতে পারে। এমনকি কৃত্রিম এই আলো আপনার ঘরের স্পেসকেও বিশাল পরিধিতে দেখাতে সাহায্য করে। আলো-ছায়ার লুকোচুরিতে ঘরে যেমন দৃষ্টিনন্দন এক পরিবেশ তৈরি হয়; ঠিক তেমনি ঘরে থাকা মানুষদের মেজাজ-মর্জিও অনেকটাই প্রভাবিত হয়। প্রাকৃতিক আলো সবসময়ই আর্শীবাদস্বরূপ কিন্তু ইন্টেরিয়র লাইটিং ঘরের প্রতিটি কোণাকে করে উজ্জ্বল এবং এমনকি ঘরের ফার্নিচারে আনে আলাদা রঙীন অনুভূতি। তাই, ঘরময় থাকার উপযোগী এবং মনকে প্রফুল্ল রাখে এমন লাইটিং সবারই কাম্য। আর আজকের আয়োজনে থাকছে সেরা পাঁচটি ইন্টেরিয়র লাইটিং ডিজাইন।
ঘরের আলো-আধারির সাথে মন মেজাজের এক সূক্ষ্ম সম্পর্ক রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় - একটি শিশুর ঘর অবশ্যই উজ্জ্বল আলোপূর্ণ হতে হবে। কেননা, এতে ছিমছাম ভাব এবং প্রাণবন্ত ভাব কাজ করে যা শিশুর বিকাশে দারুণ উপকারী। আবার একইসাথে শিশুর আরামদায়ক ঘুমের জন্য এবং ভীতি দূর করতে চাই নরম আলোর ব্যবহার, বিশেষ করে রাতের বেলা।
আপনাকে একইসাথে আরাম এবং বিনোদনের খোরাক যুগাবে। তবে তার মানে এই না যে, সব ঘরেই প্রচুর আলোর ব্যবস্থা থাকতেই হবে। কেননা, সব ঘরেরই কাজ আলাদা। তাই, ঘরের ধরনভেদে রঙ নির্বাচনের সময়ই আলোর পর্যাপ্ততা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। ঘরের রঙের সাথেই আলোর পর্যাপ্ততাও এক মুখ্য বিষয় বটে।
ঘরে পর্যাপ্ত আলো না এলে গুমোট ভাব শুধু ঘরের পরিবেশেই নয় বরং মনকেও প্রভাবিত করে। একইসাথে ভিটামিন ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ভিটামিন যা সূর্যরশ্মি থেকে পাওয়া যায়। তাই, বাড়ির বাসিন্দার স্বাস্থ্য এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখতে প্রাকৃতিক আলো পর্যাপ্ততা অত্যন্ত জরুরী। আলোর ব্যবস্থা মানেই জানালা এবং ঘরের দিক ঠিক রাখা। শুধু তাই নয় পাশাপাশি পর্দাও আলোর পর্যাপ্ততা নিশ্চিতকরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
এমন পর্দা ব্যবহার করতে হবে যা দিয়ে খুব সহজেই প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ করে ঘরকে আলোকিত করতে পারে; এমনকি পর্দা টানা থাকলেও। শুধু আলোই নয় বরং আলো আসে এমন জায়গা ইনডোর প্লান্টের ব্যবস্থা রাখুন। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশের সতেজ ভাব আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব। তবে অবশ্যই প্রাকৃতিক আলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখেই কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।
ঘরে তো ইন্টেরিয়র লাইটিং করিয়েছেন কিন্তু লাইটের কানেকশন দেয়ার জন্য যেই ক্যাবলের উপর ভরসা রেখেছেন, সেগুলোর কি করবেন? মানে ধরেন সাজানো গোছান আর ছিমছাম একটা রুমের কোন এক দেয়ালে অথবা মেঝেতে ক্যাবল দেখা যাচ্ছে; ব্যাপারটা যেমন অস্বস্তিকর তেমনি অরুচির প্রকাশ ঘটায়। তাই, যতই ইন্টেরিয়র লাইটিং করান না কেন, অবশ্যই ক্যাবল ম্যানেজমেন্টে বিশেষ নজর রাখতে হবে। এগুলো লুকানোর চাইতে বেশি ভালো হবে যদি কেউ বুঝতেই না পারে ক্যাবলগুলো গেল কোথায়?
তবে তার মানে আবার এই না যে ক্যাবলবিহীন লাইট ব্যবহার করতে হবে। কেননা, এরকম লাইটের ব্যবহার সব রুম বা সবার জন্যে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। তাই, যতটা দক্ষতার সাথে সেগুলো লুকিয়ে ফেলা যায় ততই ভালো। তাই লাইটের ব্যবস্থা এমনভাবে করতে হবে যেন ক্যাবল দেখা না যায়; অথবা এমনভাবেও করতে পারেন যেন ক্রিয়েটিভ ওয়েতে ক্যাবলকে সাজানোর কাজে লাগানো যায়। যে কোন উপায়েই হোক না কেন, সবসময় এটাই নিশ্চিত করুন যে ক্যাবল যেন আপনার ঘরের সোন্দর্য্যকে ধূলিস্মাৎ না করে।
অন্দরমহল নিয়ে ভাবতে ভাবতে বহিঃপ্রাঙ্গণের কথা বেমালুল ভুলে যাওয়াটা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ভেতরটা উজ্জ্বলতা পূর্ণ কিন্তু বাহিরটা একদম যা-তা; তাহলে কেমন লাগবে একবার ভেবেই দেখুন। তাই, বাসার সামনে এবং পেছনে উভয়দিকের উঠোন সম্পর্কেই অবগত থাকতে হবে। আবার এখনকার যুগের হিসেব করলে ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টে তো উঠোন বলতে কিছু নেই।
তাই, প্রবেশপথ এবং অবশ্যই বারান্দাগুলোর দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। কেননা, প্রবেশপথে ঢুকার মুখে কেউ যদি সেই নান্দনিকতার ছোঁয়া পায় তবে তার মনে আপনার প্রতি একটা আলাদা অনুভূতি কাজ করবে।
জ্বি, অবশ্যই এই ব্যাপারটাতে লক্ষ্য রাখবেন। ঘরকে ক্রিয়েটিভলি প্রেজেন্ট করতে খুব বেশি কিছুর দরকার হয় না। কেবল সিম্পল আর ক্রিয়েটিভ ওয়েতে ভাবতে হয়। যেমন পুরো ঘরের মাঝে একটা সুন্দর আর নজরকাড়া ল্যাম্পই পারে ঘরের সৌন্দর্য্যকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিতে। তাই, কেবল একটা ক্রিয়েটিভ আর আর্টিস্টিক মাইন্ড দরকার; বা বলা যায় রুচিশীল এক মন দরকার সবার আগে। এতে আপনার ঘর শোভিত হবে এবং মার্জিত করবে আপনার রুচিকে। চটকদার রঙ, অথবা ক্ল্যাসিকাল ডিজাইনের ল্যাম্প যদি আলোও না দেয় তা সত্ত্বেও এটি অদ্ভুত এক আভাস দিবে।
প্রযুক্তির এই যুগে জীবন অনেক বেশি অগ্রগতিময় হয়ে গেছে। তবে পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশ যেন ক্ষতি না হয় সেদিকেও নজর রাখতে হবে। যেমন ইতিমধ্যেই বেশিরভাগ লাইটই এলইডি; যা কার্বন নিঃসরণ করে না এবং এনার্জিও ক্ষয় হয় না বেশি। আবার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। এছাড়াও, চোখের সাথে যেন মানিয়ে যায় সেজন্য লাইট ডিমার ব্যবহার করা উচিত। লাইট ডিমার ঘরের পরিবেশের সাথে মন-মেজাজেও ভালো পরিবর্তন আনতে পারে। তাই, দ্বিতীয় চিন্তা ব্যতিরেকেই ইন্টেরিয়র লাইটেনিং ডিজাইনের প্রতি লক্ষ্য রাখুন। প্রয়োজনে পরামর্শ নিন অভিজ্ঞ কোন আর্কিটেক্ট বা ইন্টেরিয়র ফার্ম থেকে।