একটি গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। হাসান সাহেব, একজন অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক। তিনি তার সারাজীবনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে কেনা এক খন্ড জমির উপর অবশেষে বাড়ি নির্মান করতে যাচ্ছেন। বাড়ির নকশা কিংবা আনুসাঙ্গিক নিয়ে উনার তেমন কোনো ধারণা নেই বললেই চলে। অজ্ঞতার কারনে হোক বা যে কারনেই হোক না কেন কোন ধরনের ক্যালকুলেশন না করে, নিয়ম না মেনেই বাড়ি তৈরি করলেন অদক্ষ ডেভেলোপার কোম্পানিকে দিয়ে। ফলে দেখা গেল বাড়িটি নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছেন। তাই নিজের স্বপ্নের বাড়ি তৈরি করতে গেলে মানতে হবে বেশ কিছু নিয়ম, কিছু বিষয় আনতে হবে হিসাব- নিকাশের আওতায়। আপনার জমি ৫ কাঠা, ১০ কাঠা যেটাই হোক না কেন আপনি কখনই পুরোটার উপর আপনার বাড়ি তুলতে পারবেন না, আপনাকে আশেপাশে ছেড়ে দিতে হবে বেশ কিছু জায়গা। কতটুকু স্থান আপনাকে ছাড় দিতে হবে তার হিসাব পাবেন ফ্লোর-এরিয়া রেশিও ক্যালকুলেশন (FAR Calculation) বা ফার ক্যালকুলেশন এর মাধ্যমে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক ফার ক্যালকুলেশন সম্পর্কে বিস্তারিত। #### **ফ্লোর-এরিয়া রেশিও ক্যালকুলেশন (FAR Calculation) কী?** ফ্লোর-এরিয়া রেশিও ক্যালকুলেশন হচ্ছে একটি জমির ক্ষেত্রফলের অনুপাত অনুযায়ী বাড়ির সন্নিবেশযোগ্য সম্পূর্ণ মেঝের ক্ষেত্রফল, অর্থাৎ একটি প্লটের মাঝে যে বাড়িটি তৈরি হবে তার পুরো ফ্লোর এরিয়ার যোগফলকে উক্ত প্লটের বিদ্যমান জমির ক্ষেত্রফল দ্বারা বিভাজনের ফল। আরও সহজ করে বলা যায় এটি প্রধান বাল্ক রেগুলেশন ক্যাল্কুলেশন যা বিল্ডিংয়ের আকার নিয়ন্ত্রণ করে। যেমনঃ একটি একতলা বিল্ডিং লটের ১০০% জায়গা জুড়ে, দুই তলা ৫০% এবং চারতলা ২৫% কভার করে। ফার ক্যালকুলেশনের সূত্রটি হচ্ছে, ফার= সকল মেঝের সম্মিলিত ক্ষেত্রফল/ জমির ক্ষেত্রফল অর্থাৎ , FAR = Total floor area / Land area  #### **রোডের প্রস্থের সাথে ফার ক্যালকুলেশনের সম্পর্ক** রোডের প্রস্থের সাথে ফার ক্যালকুলেশনের একটি সম্পর্ক রয়েছে। দালান নির্মানের সময় সামনে, পেছনে এবং দুই পাশে রাস্তা থাকে, ফলে বেশকিছু জায়গা ছেড়ে দিতে হয়। কতটুক জায়গা ছাড় দিতে হবে টা জানা যায় সেটব্যাক (Setback) নিয়মের মাধ্যমে। ফ্লোর এরিয়া ও ফ্লোর সংখ্যা নির্ভর করে জমির পরিমাণ ও রাস্তার প্রস্থের উপর। #### **রাজউকের নিয়ম অনুযায়ী ফ্লোর-এরিয়া রেশিও ক্যালকুলেশন বের করার উপায়** রাজউকের ২০০৮ সালে ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় লেখা আছে ইমারত নির্মাণের সময় প্লটের আকারভেদে ৩৫ থেকে ৫০ ভাগ জমি ছেড়ে ভবন নির্মাণ করতে হবে এবং সেই অনুপাতে উপরের দিকে ভবনের উচ্চতা বাড়ানো যাবে। এখন জেনে নেওয়া যাক রাজউকের নিয়ম অনুযায়ী ফ্লোর-এরিয়া রেশিও ক্যালকুলেশন বের করার উপায়। ধরা যাক একটি প্লটের আকার ৬ কাঠা। সেটব্যাক নিয়ম অনুযায়ী, একটি আবাসিক ভবনের জন্য, রাস্তার প্রস্থ অবশ্যই ৬ মিটার হতে হবে।  এখন, যদি ফার = ৩.৭৫; MGC = ৬০.০০% (চার্ট অনুযায়ী) ম্যাক্সিমাম ফ্লোর এরিয়া (MBA) = (৬× ৭২০)×৩.৭৫ = ৪৩২০×৩.৫ = ১৬২০০ বর্গ ফুট অতএব, সেটব্যাক নিয়ম অনুযায়ী ছেড়ে দিতে হবে (MGC) = ৪৩২০× ৬০/ ১০০ = ২৫৯২ বর্গ ফুট বিল্ডিং এর তালার সংখ্যা= MBA /MGC= ১৬২০০/২৫৯২= ৬.৩ বিল্ডিং এর মোট তালার সংখ্যা= ৬.৩+ ১ (গ্রাউন্ড ফ্লোর) = ৭.৩ (.৩ হল এক্সটেনশন) এখানে, FAR = Total floor area / Land area= ১৬২০০/৪৩২০= ৩.৭৫ #### **কমার্শিয়াল প্লটের সাথে ফার ক্যালকুলেশনের সম্পর্ক** কমার্শিয়াল প্লট হচ্ছে যেখানে বাসাবাড়ি ব্যতিত রেস্টুরেন্ট, হোটেল, ফ্যাক্টরি ও শপিং মল নির্মান করা হয়। এখানেও ফার ক্যাল্কুলেশনের জন্য একি নিয়ম হলেও উপরের চিত্র লক্ষ্য করলে দেখবেন যে FAR ও MGC এর মানের সাথে একি পরিমান জমির উপর বাড়ির FAR ও MGC এর মানের সাথে ভিন্নতা রয়েছে। তাই অন্যান্য মানেও সামান্য ভিন্নতা আসবে। #### **কমন স্পেস ক্যালকুলেশন** ফার ক্যালকুলেশনের পূর্বে জেনে নেয়া যাক কমন স্পেস ক্যালকুলেশন। কমন স্পেস হচ্ছে লিফট, লবি,সিঁড়ি ঘর,লিফট মেশিন রুম ,জেনারেটর সাব- স্টেশন,কেয়ারটেকার কক্ষ, গার্ড রুম ,কমন ফ্যাসিলিটিজে যে স্থানগুলো ব্যবহার করা হয়। আপনার ফ্ল্যাটে কমন স্পেস কতটুকু হবে সেটি কীভাবে বের করবেন টা একটি উদাহরণের মাধ্যমে জেনে নিন। ধরুন আপনার জমির পরিমাণ ৮ কাঠা, মোট ফ্লোর সংখ্যা ৬ টি এবং প্রতি ফ্লোরে ইউনিট সংখ্যা ২ টি অ্যাপার্টমেন্ট সংখ্যা ১২ টি (প্রতি ফ্লোরে ২ টি করে) প্রতি ফ্লোরে নির্মাণ এরিয়া ২১০০ বর্গ ফুট প্রতি ফ্ল্যাটে নির্মাণ এরিয়া ১০৫০ বর্গ ফুট সম্পূর্ণ নির্মাণ এরিয়া ২১০০x৬= ১৩০২০০ বর্গ ফুট এখন কমন স্পেসের হিসাব করা যাকঃ- সিড়ি,লিফট ও লিফট লবি =১৬০০ বর্গ ফুট, সাবস্টেশন ও জেনারেটর রুম =৩০০ বর্গ ফুট, ড্রাইভার ওয়েটিং রুম=১০০ বর্গ ফুট, সিকিউরিটি গার্ড রুম= ৮০ বর্গ ফুট, গেস্ট ওয়েটিং রুম=২০০ বর্গ ফুট, কেয়ারটেকার রুম ও রান্নাঘর =১৫০ বর্গ ফুট, গ্রাউন্ড ফ্লোরে ২টি ওয়াশ রুম =৭০ বর্গ ফুট, লিফট মেশিন রুম =১৩৫ বর্গ ফুট, কমিউনিটি রুম এবং ওয়াশ রুম =২০০ বর্গ ফুট সর্বমোট কমন স্পেস= ২৮৩৫ বর্গ ফুট প্রত্যেক ফ্ল্যাটে কমন স্পেস, ২৮৩৫/১২= ২৩৬ বর্গ ফুট প্রত্যেক ফ্ল্যাটে কার্পেট এরিয়া, ১০৫০-২৩৬=৮১৪ বর্গ ফুট #### **ওপেন স্পেস এর সাথে সম্পর্ক** ওপেন স্পেস হচ্ছে সেই স্পেস যেটুকু অংশ আপনি ফাঁকা রাখবেন। একটি উদাহরণ দিয়ে ব্যাখা করা যাক। ধরুন একটি বিল্ডিং ৩০০০০ বর্গ ফুট এবং এর ওপেন স্পেস রেশিও হচ্ছে বিল্ডিং এরিয়ার ২৫%। তাহলে ওপেন স্পেস যতটুকু দরকার তা হচ্ছে, Open Space Required = Building Area x OSR = ৩০০০০ x২৫% = ৭৫০০ বর্গ ফুট #### **বাংলাদেশে বাড়ি নির্মানে জায়গা ছাড়ার বিধিমালা**  ২০০৮ বিধিমালা অনুযায়ী, ২ কাঠা বা এর নিচের পরিমাণ জমিতে বাড়ি বা আবাসিক হোটেল নির্মাণে জমি ছাড়তে হয় ৩০ ভাগ। ২ কাঠা থেকে ৩ কাঠা পর্যন্ত জমির ক্ষেত্রে ছাড়তে হয় সাড়ে ৩২ ভাগ, ৩ থেকে ৫ কাঠার ক্ষেত্রে সাড়ে ৩৪ এবং ৫ থেকে ১০ কাঠার ক্ষেত্রে বাড়ি নির্মাণে জমি ছাড়তে হয় সাড়ে ৩৭ ভাগ। এ ছাড়া ৯ থেকে ১২ কাঠার জমির ক্ষেত্রে ছাড়তে হয় সাড়ে ৩৯ ভাগ, ১২ থেকে ১৪ কাঠায় সাড়ে ৪২ ভাগ, ১৪ থেকে ১৮ কাঠায় সাড়ে ৪৪ ভাগ এবং ১৮ কাঠার ওপর জমির ক্ষেত্রে বাড়ি বানাতে চারপাশের জায়গা ছাড়তে হয় সাড়ে ৪৭ ভাগ। রাজউক এটি মনিটর করে থাকে। #### **বাড়ি নির্মানের ক্ষেত্রে সিভিল এভিয়েশনের বিধিমালা** যদি আপনার বাড়ি বিমানবন্দরের অথবা সামরিক বাহিনীর আশেপাশের এলাকায় হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে অবশ্যই সিভিল এভিয়েশন থেকে ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে হবে। #### **ফ্লোর-এরিয়া রেশিও ক্যালকুলেশনের গুরুত্ব** এখন ফ্লোর-এরিয়া রেশিও ক্যালকুলেশনের গুরুত্ব আমরা দুইপাশ থেকে জেনে নিবো। একটি হচ্ছে বাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে এবং আরেকটি হচ্ছে ডেভেলপারদের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব। #### **বাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে** আপনার বাড়িকে যতটা সম্ভব বসবাসের উপযোগী করে তোলার জন্য ফ্লোর-এরিয়া রেশিও ক্যালকুলেশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফার ক্যাল্কুলেশনের ফলে , জনসংখ্যার ঘনত্ব, খোলা জায়গার প্রাপ্যতা, প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে প্রস্তুতির কথা মাথায় রাখা যায়। #### **ডেভেলপারদের ক্ষেত্রে** এলাকা বা শহরের ফ্লোর-এরিয়া রেশিও এর উপর ভিত্তি করে ভবনের উচ্চতার অনুমোদন প্রদান করা হয়। ফ্লোর-এরিয়া রেশিও যত বেশি হবে তত বেশি তলা নির্মান করার অনুমোদন পাওয়া যায়। #### **ফার ক্যালকুলেশনের নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা** ##### **ভ্রান্ত ধারণা ১: উচ্চ ফ্লোর-এরিয়া রেশিও বিশিষ্ট প্রোপার্টির নির্মান ব্যয় বেশি** এটি ফ্লোর-এরিয়া রেশিও সম্পর্কিত সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রান্ত ধারণাগুলোর মধ্যে একটি। উচ্চ ফ্লোর-এরিয়া রেশিও মান মানে অতিরিক্ত পরিকাঠামোগত খরচ হবে। যাইহোক, সম্পত্তির মূল্যের সাথে এর সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই। ##### **ভ্রান্ত ধারণা ২: ফ্লোর-এরিয়া রেশিও না থাকলে উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি ব্যহত হয়** যেখানে ফ্লোর-এরিয়া রেশিও অনুপস্থিত সেখানে উন্নয়নমূলক প্রকল্প নির্মাণে কোনো বাঁধা নেই। কারন, ডেভেলপাররা প্রকল্পগুলি নির্মাণের আগে তাদের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে। আশা করছি আজকের এই লেখার মাধ্যমে আপনারা ফার ক্যালকুলেশন সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। আপনার স্বপ্নের নীড়টি যাতে ঝামেলাহীনভাবে নিজের করে নিতে পারেন সেজন্য আপনার পাশে সবসময় পাবেন ফ্লাগ বাংলাদেশকে (https://www.flagbangladesh.com) । সাথেই থাকুন।
Continue Reading
আয়ারল্যান্ড। উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের কোল ঘেঁষে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে গড়ে ওঠা একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। আয়তনের দিক দিয়ে ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপ এটি। দৃষ্টিনন্দন পাহাড়, নদী, সাগরে ঘেরা প্রকৃতির এক অনন্য লীলাভূমি যেন এই আয়ারল্যান্ড। দীর্ঘদিন ব্রিটিশ উপনিবেশে থাকার পর স্বাধীনতার পরে আইরিশ রিপাবলিক নামেই পরিচিতি লাভ করে দেশটি। এখানকার বেশিরভাগ মানুষই ক্যাথলিক খ্রিষ্টান। তাইতো আর দশটা মুসলিম রাষ্ট্রের ন্যায় রমজানে রোজা পালনের তেমন কোনো ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি এ দেশে। তবে ধীরে ধীরে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানেও জনগণের মাঝে সিয়াম পালনে যথেষ্ট ভাব গাম্ভীর্য লক্ষ করা যায়। ইসলামি ক্যালেন্ডারের নবম মাস এ রমজান মাস। পুরো রমজান মাস জুড়েই সিয়াম পালনে এক উৎসব মুখর পরিবেশ লক্ষ করা যায় দেশটির ইসলামিক সেন্টারগুলোতে। সব মিলিয়ে দেশটিতে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা মুসলিম সংস্কৃতিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে যেন রমজানের এই দিনগুলোতে। #### **শুরুর আগে-before the start** ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী আয়ারল্যান্ডের জনসংখ্যা ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ৭২৮ জন। এর মধ্যে মাত্র ১.৩৩ শতাংশ লোক মুসলিম ধর্মাবলম্বী। তবে আয়ারল্যান্ডে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম গুলোর একটি হলো ইসলাম। এখানে ২০১১ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ইসলাম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩০ গুণ। তবে এখানকার মুসলিম জনগোষ্ঠীর অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যক হলেন অভিবাসী মুসলিম। অতীতে আফ্রিকা আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে মুসলমানদের আগমন ঘটে এখানে। শিক্ষা কিংবা জীবিকার টানে তারা ছুটে আসেন আয়ারল্যান্ডে। আগত মুসলিমদের মধ্যে কেউ কেউ আবার আইরিশ মেয়েদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এদেশের নাগরিকত্ব লাভ করেন। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়া,সাব সাহারান আফ্রিকা কিংবা বলকান এলাকা থেকে অনেক মুসলিম পাড়ি জমান এদেশে। তবে বর্তমানে নওমুসলিমদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলেছে এখানে। একদিকে মোট জনসংখ্যার অতি অল্প সংখ্যক মুসলিম, তারপর আবার এখানে বিভিন্ন দেশের মুসলিমদের সংমিশ্রণ ঘটায় রমজান মাসকে ঘিরে একেবারে সুনির্দিষ্ট কোনো সংস্কৃতি এখানে গড়ে ওঠেনি। তবে বিভিন্ন দেশের অভিবাসী মুসলমানদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একত্রে সিয়াম পালনের দৃষ্টান্ত এক অনন্য মাত্রা প্রদান করেছে আয়ারল্যান্ডের মুসলিম সংস্কৃতিতে। ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের অনন্য এক কৃষ্টি। #### **রমজানের দিনগুলোতে-Ramadan Days** আয়ারল্যান্ডের মুসলিম জনগোষ্ঠীর সিংহভাগেরই অবস্থান দেশটির সর্ববৃহৎ শহর ডাবলিনে। ডাবলিন আবার আয়ারল্যান্ডের রাজধানীও বটে। স্বাভাবিক ভাবেই দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগের অবস্থানও এই ডাবলিনেই। ১৯৫৯ সালে এই ডাবলিনেই 'ডাবলিন ইসলামিক সোসাইটি' নামে গড়ে ওঠে আয়ারল্যান্ডের প্রথম ইসলামিক সেন্টার। পরবর্তীতে যা ইসলামিক ফাউন্ডেশন অব আয়ারল্যান্ড নামেই পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে দেশটিতে ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশন অব আয়ারল্যান্ড, ইসলামিক কালচারাল সেন্টার অব আয়ারল্যান্ড সহ বিভিন্ন ইসলামিক সেন্টার গড়ে ওঠে। দেশটিতে ইসলামের প্রচার প্রসারে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এ ইসলামিক সেন্টারগুলো। রমজানের সময়ে রোজায় সেহরি ও ইফতারের সময়-সূচী জানানো থেকে শুরু করে পুরো রমজান মাস জুড়েই আয়োজন করে নান্দনিক সব ইসলামি আয়োজন। তারই অংশ হিসেবে মসজিদ আর ইসলামিক সেন্টার গুলোতে আয়োজন করা হয় আরবি ভাষা শিক্ষা আর ধর্মীয় আলোচনার আয়োজন। এছাড়া কুরআন শিক্ষা সহ কুরআন তিলাওয়াত বিষয়ক নানা ধরনের প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয় এখানে। পৃথিবীর যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে রোজা রাখতে হয় তাদের মধ্যে অন্যতম একটি হলো আয়ারল্যান্ড। এ বছর সেখানে সেহরির শেষ সময় প্রায় ভোর ৪ টা আর ইফতারের সময় প্রায় সন্ধ্যা ৭ টা। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ১৫ ঘণ্টার মতো রোজা থাকতে হবে এ বছর এখানে। তবে আয়ারল্যান্ডে কোনো কোনো বছর রমজানে ১৯- ২০ ঘণ্টার মতোও রোজা রাখতে হয়। মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলোতে রমজানের সময়ে অফিস, আদালতের সময় সূচীতে অনেকটা পরিবর্তন লক্ষ করা যায়, কর্মঘণ্টা কমে দেওয়া হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সীমিত আকারে চালু রাখা হয় কিংবা বন্ধ রাখা হয়। এক কথায় এক ধরনের ধীরতা লক্ষ করা যায় এ সময় চারপাশের ব্যস্ত পরিবেশে। কিন্তু আয়ারল্যান্ডে এর ব্যতিক্রম। অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব কিছুই চলে আগের মতোই। তাই মুসলিম রোজাদারদের জন্য কর্ম ব্যস্ততার পাশাপাশি সাওম পালন করা এক চ্যালেঞ্জের বিষয় এখানে। তবে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা ঠিকই শত বাধাকে উপেক্ষা করে মাসব্যাপী রোজা রাখে, ইবাদত বন্দেগী করে। এখানে সেহরিতে আইরিশ খাবারগুলোর পাশাপাশি ব্যক্তি স্বাতন্ত্র অনুযায়ী প্রাধান্য পায় আরবীয়,জার্মান কিংবা নাইজেরীয় খাবার। এছাড়া মুসলিম কমিউনিটিগুলোতে বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা একত্রে বিভিন্ন খাবারের পসরা নিয়ে বাজারের আয়োজন করে। সেখান থেকেও পছন্দ মতো সেহরি ও ইফতারের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার সহ অন্যান্য দ্রব্যাদিও পাওয়া যায় সুলভে। #### **উন্মুক্ত ইফতার-Open Iftar** আয়ারল্যান্ডের রমজানের সংস্কৃতিতে অনন্য একটি উদ্যোগ হচ্ছে এই উন্মুক্ত ইফতারের আয়োজন। দেশটির বিভিন্ন ইসলামিক সেন্টারগুলোতে ও মসজিদে আয়োজন করা হয় এমন সবার জন্য উন্মুক্ত ইফতারির আয়োজন। মুসলমানদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিদেরও দাওয়াত দেওয়া হয় এই আয়োজনে। অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ভাই-বোনদের সাথে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন রক্ষার এ এক অনন্য নজির স্থাপন হয় যেন আন্তর্জাতিক এই ইফতার আয়োজনে। এছাড়া প্রতিবেশী বিধর্মী ভাই-বোনদের ইসলাম সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেওয়াও এই আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য। রাজধানী ডাবলিন, কর্কের ইসলামিক সেন্টারসহ বিভিন্ন জায়গায় আয়োজন করা হয় এমন মিলন মেলার। উন্মুক্ত এই ইফতার আয়োজনে আইরিশ খাবার সহ জার্মান, আরবীয়,নাইজেরীয় ইফতারির ব্যবস্থাও থাকে। বাহারি সব খাবারের পসরা দেখে কেউ একে আন্তর্জাতিক ফুড ফেস্টিভাল ভেবে বসলেও ভুল হবে না খুব একটা।  কমিউনিটির লোকেদের পছন্দ অনুযায়ী পরিবেশন করা হয় জলফ ভাত (সরু চালের ভাত,টমেটো,পিঁয়াজ,সবজি ও মাংসের সমন্বয়ে বানানো এক ধরনের পশ্চিম আফ্রিকান খাবার),ডাল,বেগুন ভাজা,চিকেন স্টিউ(মুরগির মাংস,আলু,মিষ্টি আলু,পিঁয়াজ প্রভৃতির সমন্বয়ে তরলে রান্না করা এক ধরনের খাবার),ল্যাম্ব ট্যাজিন(ভেড়ার মাংসের তৈরি উত্তর আফ্রিকান এক ধরনের খাবার)। বিভিন্ন দেশ থেকে আয়ারল্যান্ডে পড়তে আসা শিক্ষার্থী,চাকুরিজীবীসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষের এক অনন্য মিলন মেলায় পরিণত হয় বাহারি এ ইফতার আয়োজন। তবে করোনার প্রাদুর্ভাবের জন্য গত বছর রমজান মাসে এমন আয়োজন থেকে বঞ্চিত হয়েছিল আয়ারল্যান্ডবাসী। উপেক্ষিত ছিল ভ্রাতৃত্বের মিলন মেলা। মসজিদে-মসজিদে আর ইসলামিক সেন্টারগুলোতে বিরাজ করছিল নির্জন শূন্যতা। ধীরে ধীরে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় মসজিদ আর ইসলামিক সেন্টারগুলো আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেতে শুরু করেছে। রমজান মাসকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এ মিলন মেলা আবার প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। #### **তারাবির নামাজের পরে বিশেষ আলোচনা-After Tarabi** সন্ধ্যার উন্মুক্ত ইফতারে মিলিত হয়ে কর্মচাঞ্চল্যে ভরপুর দিনভর রোজা আর ইবাদতের ক্লান্তি যেন নিমিষেই শেষ হয়ে যায় রোজাদারদের। এরপর মসজিদে মসজিদে শুরু হয় তারাবির সালাতের প্রস্তুতি। কোনো কোনো ইসলামিক সেন্টারে তারাবির নামাজের পরেও চলে রাত জেগে ইবাদত। ইমাম সাহেব দীর্ঘক্ষণ ধরে ধর্মীয় আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে আলোচ্য বিষয়ের উপর প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতার আকারে সঠিক উত্তরদাতাকে ২০০ ইউরো পর্যন্ত পুরস্কৃত করা হয়। এভাবে গভীর রাত পর্যন্ত চলে আয়োজন।  সব মিলিয়ে আয়ারল্যান্ডের মতো একটি ইসলাম অপ্রধান রাষ্ট্রে রমজান মাসে মুসলিম ঐতিহ্যকে ধরে রেখে এভাবেই গড়ে উঠছে মুসলিম ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের এক অনন্য নজির। রমজানের ত্যাগ ও সংযমের মহিমায় জীবন গড়তে আগ্রহী হচ্ছে নতুন প্রজন্ম।
Continue Reading
ঘর বা বাসস্থান। যে স্থান আমাদের খুব আপন এবং শান্তির জায়গা! এই ঘরকে সুন্দর করে তৈরি করতে এবং নিজেদের এবং অতিথিদের কাছে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে আমরা কতো কিছুই না করে থাকি। ঘরের জন্য পর্দা কিনতে গিয়ে সবচেয়ে সুন্দর পর্দাগুলোই আমরা বেছে নিয়ে আসি কিন্তু অনেক সময়ই আমাদের জানার অভাবে দেখা যায় মার্কেট থেকে পর্দা কিনে আনার পর ঘরের সাথে আর মানানসই হয়না। আচ্ছা! আপনি জানেন কি? গৃহসজ্জায় সঠিক পর্দা নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আপানার ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে পর্দা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে কিছু বিষয়। কিছু প্রয়োজনীয় টিপস আপনাদের সাথে শেয়ার করব আজকের এই ফিচারেই। ### **গৃহসজ্জার জন্য পর্দা নির্বাচন করার কিছু টিপস-Some tips for choosing curtains for decoration** আপানার ঘরকে আকর্ষণীয় করে তুলতে নিচের টিপসগুলো অনুসরণ করতে পারেন। #### **পর্দার ফেব্রিক এবং পাল্লা নির্বাচন-Selection of curtain fabric and shade** পর্দা কিনতে গেলেই শুরুতেই যে বিষয়টি খেয়াল রাখবেন তা হচ্ছে পর্দার ফেব্রিক এবং পাল্লা/ লাইনিং। মার্কেটে বিভিন্ন ফেব্রিকের পর্দা পাওয়া যায়। লেইসের তৈরি জাঁকজমক পর্দার পাশাপাশি হালকা ওজনের সুতি কাপড়ের পর্দা এমনকি ভারি মখমলের পর্দাও পাবেন। এছাড়াও পাল্লা বা লাইনিং এর ক্ষেত্রে সিঙ্গেল এবং ডাবল লাইনিং এর পর্দা পাবেন। তবে যে পর্দাই কিনুন না কেন কেনার সময় সবসময় তিনটি বিষয় খেয়াল রাখবেন।  সেগুলো হচ্ছে- - পর্দার মধ্যে দিয়ে ঘরের ভেতর ঠিকঠাকভাবে সূর্যের আলো প্রবেশ করছে কিনা কিংবা আপনি যতটুকু আলো প্রবেশ করাতে চাচ্ছেন তা পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করছে কিনা। - আপানার রুমের ডেকোরেশন অনুযায়ী পর্দাটির ফেব্রিক মানানসই কিনা। যেমনঃ আপনি যদি শোবার ঘরের জন্য পর্দা কিনেন সেক্ষেত্রে হালকা ফেব্রিকের পর্দা বেছে নিন। আর আপনি যদি ড্রইংরুমের জন্য পর্দা কিনতে চান সেক্ষেত্রে একটু ভারি মখমলের পর্দা বেছে নিন। - আপনি আপনার ঘরে কতটুকু আলো প্রবেশ করাতে চাচ্ছেন পাশাপাশি কতটুকু গোপনীয়তা রক্ষা করতে চাচ্ছেন তা পর্দার ফেব্রিকের পাশাপাশি পর্দায় কতটি পাল্লা বা লাইন আছে তার উপর নির্ভর করে। সরাসরি সূর্যের আলো আসে এমন জানালার পর্দাগুলিতে সিঙ্গেল লাইনিং পর্দা লাগালে পর্দার রঙ সহজে নষ্ট হবে না এবং দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে। তবে, লাইনিংয়ের কারণে পর্দা যে একটু ভারি হবে সেটা মাথায় রাখুন। তাই এ বিষয়ে খুব ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মনে রাখবেন, ভিন্ন ভিন্ন ফেব্রিকের পর্দা এবং লাইনিং আপনার রুমের লুককে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রেজেন্ট করবে। #### **রক্ষণাবেক্ষণের ধরন অনুযায়ী পর্দা নির্বাচন করুন-Select curtains according to maintenance type** পর্দা কীভাবে এবং কত দিন পর পর পরিষ্কার করা জরুরি তা পর্দার ফেব্রিকের উপর নির্ভর করে। তবে ঘরে ধুলাবালি কম প্রবেশ করলে যেকোনো ফেব্রিকের তৈরি পর্দাই প্রতি ৩-৬ মাস পর পর একবার করে ওয়াশ করে নিতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু ফেব্রিক আছে যেগুলোর তৈরি পর্দার আলাদা যত্ন নিতে হয়।  আপনি যদি- - পর্দা ঘন ঘন ওয়াশ করতে না চান তাহলে সুতি অথবা সিনথেটিক কাপড়ের পর্দা নির্বাচন করুন। এই ফেব্রিকের তৈরি পর্দাগুলি সহজে ওয়াশিং মেশিনেও ধোয়া যায়। এছাড়াও পরিবারের কোনো সদস্যের ডাস্ট অ্যালার্জি থাকলে, ঘরে ছোট বাচ্চা কিংবা পোষা প্রাণী থাকলে এইধনের ফেব্রিকের পর্দা আপনার জন্য বেস্ট অপশন। - কুঁচিওয়ালা পর্দা লাগাতে চান তাহলে সেটি যে ফেব্রিকেরই হোক না কেন, সবসময় ড্রাইওয়াশ করতে হবে। সিল্কের স্বচ্ছ কাপড়, উল বা পশমি কাপড়ের পর্দা অবশ্যই ড্রাইক্লিনিং করতে হবে। তবে ড্রাইক্লিন করলে কালার এবং শেইপ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে তাই, এধরনের পর্দার কালার এবং শেইপ যাতে বজায় থাকে সেজন্য ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। - এছাড়াও পরিবারের সদস্যদের ডাস্ট অ্যালার্জি থাকলে সপ্তাহে একবার পর্দা ধোয়া উচিত। #### **রং এবং ডিজাইন অনুযায়ী পর্দা কিনুন-Buy curtains according to color and design** পর্দা কিনতে গেলে ফেব্রিকের পাশাপাশি রং এবং ডিজাইনের প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন। আপনি লাইট নাকি ডিপ কালারের পর্দা চাচ্ছেন, প্রিন্টেড নাকি সলিড ডিজাইনের পর্দা চাচ্ছেন তা ভালো করে ভেবে নিন। দেয়াল এবং আসবাব পত্রের রঙের সাথে মিলিয়ে পর্দার রং নির্বাচন করুন। দেয়াল রং এবং পর্দার রং কখনোই যাতে একই না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ড্রইংরুমের জন্য হালকা রঙের পাতলা পর্দাই হবে মানানসই। এক্ষেত্রে সাদা, হালকা নীল কিংবা অফ হোয়াইট রঙের সিনথেটিক কাপড়ের পর্দা বেছে নেওয়া যেতে পারে। এতে করে আলো ও বাতাস বেশি চলাচল করতে পারবে।  আসবাবপত্রের রঙের সাথে কন্ট্রাস্ট হবে এরকম রং নির্বাচন করতে হবে। এছাড়াও আপনি সলিড নাকি প্রিন্টেড পর্দা কিনবেন কিনা তা নির্ধারণ করতেও ঘরের আসবাব এবং অন্যান্য ডেকোরেশন ভালোভাবে দেখতে হবে। যদি রুমের ডেকোরেশন এবং আসবাবপত্র হালকা এক রঙের হয় সেখত্রে প্রিন্টেড এবং একটু রঙিন পর্দা ব্যবহার করুন। #### **সঠিকভাবে পর্দার দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ নির্ধারণ করুন-Determine the curtain length and width correctly** আপনি যদি চান থিয়েটারের স্টেজের পর্দার মত আপনার ঘরের পর্দাও যদি ফ্লোর স্পর্শ করুক, তাহলে একটু লম্বা পর্দা (Curtain length) কিনুন। তবে আপনার ঘরে ছোট বাচ্চা থাকলে ফ্লোর টাচ পর্দা ব্যবহার করবেন না। এতে করে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা থাকে। তাই আদর্শ দৈর্ঘ্য হচ্ছে ফ্লোর থেকে কয়েক ইঞ্চি উঁচুতে পর্দার শেষপ্রান্ত রাখা।  জানালার ফলক বা দরজার ছাঁচের প্রস্থের উপর পর্দার আদর্শ প্রস্থ নির্ভর করে। এক্ষেত্রে পরিমাপের উপায় হচ্ছে ফ্রেমটি পরিমাপ করা এবং জানালার সমান রড (Hanging rods with the same width in window) ফ্রেমে স্থাপন করা। ফ্রেমের দৈর্ঘ্যকে ২ বা ২.৫ দিয়ে গুন করলে পর্দার আদর্শ প্রস্থ পেয়ে যাবেন। #### **পর্দা স্থাপনের রড খুব উঁচু কিংবা বেশি নিচুতে স্থাপন করবেন না-Do not place the curtain rod too high or too low** ধরুন, উপরের সবগুলো পয়েন্ট মেনে আপনি দোকান কিংবা অনলাইন শপ থেকে পর্দা কিনেছেন। কিন্তু পর্দা লাগানোর পর দেখতে আর সুন্দর লাগছে না কারন পর্দার রডটি সঠিক উচ্ছতায় স্থাপন করা হয়নি। তাই পর্দার রডের দৈর্ঘ্য মাপার পাশাপাশি আরও একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সেটি হলো রড খুব উঁচু কিংবা বেশি নিচুতে (Placing curtain rod too low) স্থাপন করবেন না। রড যদি খুব উঁচুতে স্থাপন করেন, পর্দা তাহলে বেশ উঁচুতে উঠে যাবে। আবার বেশি নিচুতে স্থাপন করলে পর্দা ফ্লোরে গড়াগড়ি খাবে, যা দেখতে ভীষণ বেমানান লাগবে। তাই সঠিকভাবে মাপ নিয়ে একটি আদর্শ উচ্চতায় পর্দার রড স্থাপন করুন।  সকল রুমে পর্দার রডের উচ্চতা একই রাখুন। এক্ষেত্রে রড স্থাপনের পূর্বে মাপ নিয়ে যে স্থানে রড স্থাপন করবেন সেখানে শক্ত কাগজের টেম্পলেট লাগিয়ে মার্ক করে রাখতে পারেন, তাহলে ভুলভাবে রড স্থাপনের সম্ভাবনা থাকবে না। #### **পর্দায় কুঁচকানোভাব আসলে তা রোধ করা-Prevents curtain wrinkling** আপনি দোকান থেকে পর্দা কিনে আনলেন, এনে দেখলেন পর্দার ভাঁজ গুলো নষ্ট হয়ে উল্টাপাল্টা কুঁচকিয়ে আছে। আপনি হাত দিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করলেও ঠিক হচ্ছে না। এরকম পর্দা (Hanging wrinkled curtain) জানালা বা দরজায় লাগালে সুন্দর দেখাবে না। ৩ টি উপায় পর্দার কুঁচকানোভাব দূর করতে পারেন- - আপানার পর্দার ম্যাটেরিয়াল অনুযায়ী ধুয়ে কিংবা ড্রাই ওয়াশ করবেন। এতে কুঁচকানোভাব দূর হবে। - পর্দার ফেব্রিক অনুযায়ী সঠিক তাপমাত্রা সেট করে ইস্ত্রি ব্যবহার করে পর্দা আয়রণ করতে পারেন। পর্দা হচ্ছে গৃহের আব্রু। আপানার অন্দরের সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে যদি সঠিক পর্দা নির্বাচন করতে পাবেন। আশা করছি আজকের এই টিপসগুলো আপনাদের ঘরের পর্দা কিনতে কাজে দিবে। আপনার ভবিষ্যত প্রজন্মকে সবুজের ছায়াঘেরা পরিবেশে বেড়ে উঠতে দেখতে চান কিংবা রাজধানীর অন্যতম অভিজাত এলাকায় নিজের একটি ছিমছাম ফ্ল্যাট পেতে চান? অথবা আপনার বাড়ি বিক্রি করতে চান? আপানার জন্যই আছে ফ্লাগ বাংলাদেশ। এছাড়াও আপনার পুরোনো কিংবা নতুন ঘরকে রাঙ্গিয়ে তুলতে ফ্লাগ বাংলাদেশ (https://www.flagbangladesh.com) আপনার সাথে আছে সবসময়।
Continue Reading
নিজের একটি স্থায়ী আবাসন কে না চায়। কেউ ঋণ করে কিংবা সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে কিনে নেয় স্বপ্নের আবস্থল। বর্তমানে ঝামেলামুক্তভাবে বাড়ি কিনতে হলে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ভাবতে হয়। সেটি দেশের যে প্রান্তেই হোক না কেন! বাড়ি কেনার পূর্বে কিছু বিষয় আছে যা অবশ্যই আপনার বাড়ি ক্রয়ের সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব ফেলে। যেমনঃ লোকেশন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সেই এলাকার মানুষদের আচার- আচরণ, বাড়ির কাগজ পত্র বৈধ কিনা ইত্যাদি। বাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো প্রভাব ফেলে কিংবা যে বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনায় রাখবেন সেগুলো জেনে নিন আজকের এই ফিচারে। ### **বাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো প্রভাব ফেলে-Affect the purchase of a home** আপনি যখন একটি বাড়ি কেনার চিন্তাভাবনা করবেন তখন প্রধানত দুই ধরনের বিষয়ের উপর নির্ভর করবে। একটি হচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক এবং অপরটি হলো রিপ্রেজান্টেটিভ অর্থাৎ যে বিষয়গুলো বাহ্যিকভাবে প্রভাব ফেলে। #### **বাহ্যিক ফ্যাক্টরসমূহ-Outside Facts** বাহ্যিকভাবে প্রভাব ফেলে যে বিষয়গুলো সেগুলো হচ্ছেঃ #### **বাজেটের সাথে সামঞ্জস্যতা-Compatibility with the budget**  বাড়ি কিনতে গেলে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি প্রভাব ফেলে সেটি হচ্ছে বাড়ির দামের সাথে ক্রেতার ক্রয়সীমার সাধ্য। ধরুন একটি বাড়ি আপনার খুব পছন্দ হয়েছে। সব সুযোগ-সুবিধাবলী আপনার মন মতন কিন্তু দামাদামির বিষয়টি যখন আসলো তখন দেখলেন যে দাম একটু কিংবা অনেকখানি বেশি যা আপনার সাধ্যের বাইরে। তখন আর বাড়িটি কেনা হবেনা। তাই দাম নিয়ে আগেই কিছুটা ধারণা নিয়ে যাওয়া উচিত। #### **লোকেশন-Location** বাড়ি কিনতে গেলে বাজেটের পরেই মাথায় যে বিষয়টি আসে সেটি হলো বাড়ির লোকেশন। বাড়ির লোকেশন অফিস থেকে কতটুকু দূরে, যাতায়াত সুবিধা কিরকম আছে, এছাড়াও লোকেশনটি এমন কোন জায়গায় যেখানে দোকানপাট, হাসপাতাল, রেস্টুরেণ্ট, ফিটনেস সেন্টার, পার্ক, স্কুল-কলেজ আছে কিংবা তার আশেপাশে আছে কিনা তা অবশ্যই ক্রেতার বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। #### **নিরাপত্তা ব্যবস্থা-Security** এটি খুব স্বাভাবিক বিষয় যে আপনি যখন একটি বাড়ি কিনবেন বাড়িটি যে এলাকায় অবস্থিত সেই এলাকাটি নিরাপদ কিনা তা অবশ্যই বিবেচনায় রাখবেন। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে থাকলে সেই এলাকা এড়িয়ে চলবেন। #### **কাগজপত্রে কিংবা কোন আইনি ঝামেলা আছে কিনা-Legal issues or Documents**  বাড়ি, বাড়ির লোকেশন, এলাকার সকল সুযোগ-সুবিধা পছন্দ হওয়ার পর যে বিষয়টি ক্রেতাদের চিন্তাভাবনায় আসে সেটি হলো বাড়ির দলিলপত্রে কোনো ঝামেলা আছে কিনা কিংবা বাড়িটির চলমান কোনো আইনি ঝামেলা আছে কিনা। জমির করের হালনাগাদ খেয়াল রাখতে হবে। ভূমি কর না দেওয়ার কারণে কোন সার্টিফিকেট কেস আছে কিনা তা খুঁজে বের করা প্রয়োজন। #### **পূর্ববর্তী মালিকের চারিত্রিক আচার আচরণ-Behavior of the previous owner's character** পূর্ববর্তী মালিকের চারিত্রিক আচার আচরণ কেমন ছিল তা বাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই ক্রেতার মনে প্রভাব ফেলে। হোক সেটি কোনো ডেভেলপার কোম্পানি কিংবা কোনো একক মালিক। #### **নকশার সাথে বাড়ির মিল-Similarity of home with design** বিক্রয়ের জন্য প্রস্তাবিত বাড়ির প্রকৃত অবস্থার সাথে ঘটনাস্থলের নকশা মেলে কিনা এই বিষয়টিও বেশ প্রভাব ফেলে। প্রয়োজনে আশেপাশের জমির মালিকদের কাছ থেকে দাগ-খতিয়ান জানার পর গরমিল পেলে বাড়ি না কেনা। #### **রাজউকের অনুমোদন-Approval of Rajuk** বাড়ি কিনতে গেলে দলিল, নকশা দেখার পাশাপাশি রাজউকের অনুমোদন আছে কি নাই এই বিষয়টিও বেশ প্রভাব ফেলে। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের সংযোগ, মাল্টি লেভেল সিকিউরিটি সিস্টেম, জরুরী ড্রেনেজ সিস্টেম ঠিকঠাক আছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখে এরপর কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। #### **কিস্তির ধরন-Type of installment** যদি বাড়িটি কিস্তিতে কেনা হয়, চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে কতটি কিস্তিতে টাকা শোধ হবে । যদি কোন কারণে ক্রয় করা না যায়, তাহলে এটি কিভাবে নিষ্পত্তি করা হবে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। #### **খাসজমি-Land** এটি নিশ্চিত করতে হবে যে বাড়িটি সরকারের খাস জমির উপর নির্মিত কিনা । এছাড়াও বাড়ির জমিটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকায় আছে কিনা তা জেনে নেয়া উচিত। বাড়িটি আগে যে কোন সময়ে অধিগ্রহণ করা হয়েছে বা প্রক্রিয়াধীন আছে কিনা, তা ওয়াকফ কিনা এসকল বিষয়ের উপরও বাড়ি কেনার সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব ফেলে। #### **মনস্তাত্ত্বিক ফ্যাক্টর-Psychological Factors** বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে কিছু ফ্যাক্টর রয়েছে যা ক্রেতার মনে প্রভাব ফেলে। যেমনঃ #### **আবেগ-Emotion**  যখন কেউ একটি বাড়ি কিনে সে অবশ্যই থাকার জন্য বাড়িটি কিনে। বাড়ি এমন একটি জায়গা যেখানে নানা স্মৃতি জরিয়ে থাকবে। বাড়ির প্রতি ভবিষ্যতে একটি আত্মিক বন্ধন গড়ে উঠবে। তাই বাড়িটি দেখতে সুন্দর, পরিপাটি এবং ভালো একটি লোকেশনে থাকলে যে কেউই প্রথম দেখাতেই বাড়িটি কিনে নিতে চাবে। ২০১৩ সালে, কমনওয়েলথ ব্যাঙ্ক অস্ট্রেলিয়ান ক্রেতাদের একটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে যে ৪৪ শতাংশ ব্যাক্তি বাড়ি কেনার জন্য বেশি অর্থ প্রদান করেছে কারন তারা সত্যিই বাড়িটি পছন্দ করেছে ৷ #### **কুসংস্কার-Superstition** এই আধুনিক যুগে এসেও অনেকসময় ক্রেতাদের মনে নানাবিধ কুসংস্কার বিরাজ করে। যেমনঃ অনেকে ৭ কে শুভ সংখ্যা এবং ১৩ কে অশুভ সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করেন। তাই বাড়ি কিনতে গেলেও বাড়ির নাম্বার কিংবা অন্যান্য কোনো মতবাত যার কোনো ভিত্তি নেই, এসকল বিষয়ও প্রভাব ফেলে। #### **অনুভূত মান-Perceived value** আরেকটি মনস্তাত্ত্বিক ফ্যাক্টর হচ্ছে অনুভূত মান (Perceive value). একটি উদাহরণ হচ্ছে, ধরুন আপনি একটি বাড়ি কিনবেন। বাড়িটি আপানর বাজেট, লোকেশন এবং সুযোগ সুবিধা অনুযায়ী আপনার কাছে একদম পারফেক্ট লেগেছে কিন্তু বাড়ির দেয়ালের রং বেশ পুরনো। যেন শত বছর আগে দেয়ালে রং করানো হয়েছে। আপনি কি তাহলে বাড়িটি কিনবেন? নিশ্চয়ই না! কিন্তু একই বাড়িটি যদি নতুন করে সুন্দরভাবে রং করানো থাকত তাহলে আপনি কিনে নিতেন।  এই রং করা বাড়ি এর পারসিভ ভ্যালু কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে এবং কেনার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি করেছে। আরও কিছু বিষয় যা বাড়ির পারসিভ ভ্যালু বাড়ায় সেটি হছে বাড়ির বহিরাঙ্গন এবং অভ্যন্তরীন ডিজাইন। #### **প্রথম দেখায় অনুভূতি-First Impression** বাংলায় একটি প্রবাদ রয়েছে, “আগে দর্শনধারী, এরপর গুণবিচারী।” প্রথম দেখায় অনুভূতি (First Impression) অনেকটা অনুভূত মানের মতই। একটি বাড়ি যদি দেখতে জির্ণশীর্ণ হয়, বাড়ির চারপাশ এলোমেলো, ভাঙ্গা প্রবেশদ্বার থাকে; তাহলে স্বাভাবিকভাবেই যে কেউই বাড়িটি কিনতে চাইবে না। তাই বাড়ি বিক্রির পূর্বে সুন্দর এবং পরিপাটি করে বাড়ি সাজিয়ে নিতে হবে। দেয়ালের রং পুরনো হলে রং করতে হবে। এলোমেলো বাগান থাকলে তা সুন্দর ফুলের কিংবা ফল গাছ দিয়ে সাজিয়ে নিতে হবে। প্রবেশদ্বার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং ভাঙ্গা থাকলে তা মেরামত করতে হবে। #### **ভিন্ন বাড়ি ভিন্ন গল্প- Different Story** প্রতিটি বাড়ির পেছনে কিছু গল্প থাকে। সদ্য নতুন বাড়ির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য গল্প কিংবা ইতিহাস না থাকলেও পুরোনো বাড়ির পেছনের গল্প থাকা বেশ স্বাভাবিক। অনেক সময় এই গল্পই ক্রেতাকে বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। #### **রিভিউ-Review**  বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অথবা বিক্রেতার ওয়েবসাইটে অন্যান্য কাস্টমারদের রিভিউ অনেক ক্ষেত্রেই বাড়ি কেনার সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব ফেলে। #### **লাইফস্টাইল-Lifestyle** প্রত্যেকটি মানুষের লাইফস্টাইল ভিন্ন ধরনের। কারো সাথে কখনোই অন্য কারোর লাইফস্টাইল মিলবে না। কেউ কেউ বদ্ধ পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে, কেউ আবার খোলামেলা, আলো-বাতাস পূর্ণ স্থানে থাকতে পছন্দ করে। অনেকে আছে বাড়ির আশে পাশে ব্যায়াম করার জন্য পার্ক কিংবা ফিটনেস সেন্টার খুঁজে। কেউ কেউ নিজের বাড়ির মধ্যেই ব্যায়ামের সকল সুযোগ- সুবিধা পেতে চায়। তাই জীবনযাত্রার ধরনও একটি বাড়ি কিনতে প্রভাব ফেলে। উপরোক্ত ফ্যাক্টর বা বিষয়গুলো বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতার মনে অবশ্যই প্রভাব ফেলে। আপনি যদি ঝামেলামুক্ত উপায়ে ফ্ল্যাট কিংবা বাড়ি কিনতে চান তবে নির্দ্বিধায় যোগাযোগ করুন ফ্লাগ বাংলাদেশ (https://www.flagbangladesh.com) এ। ফ্লাগ বাংলাদেশ আপনার পাশে আছে সবসময়।
Continue Reading
"এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান; জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে চলে যেতে হবে আমাদের।" প্রবহমানতায় যেন জীবনের ধর্ম। নিরবধি ছুটে চলা সময়ের বিবর্তনে আজকের শিশু পরিণত হয় আগামীর বৃদ্ধে। শৈশব,কৈশোর,যৌবন পেরিয়ে আসে সে ক্রান্তিলগ্ন। বার্ধক্য। তিলতিল করে গড়ে তোলা সুখের সংসারে বোঝা হিসেবে পরিগণিত হয় এক সময়কার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি। অবশেষে ঠাঁই হয় বৃদ্ধাশ্রমে। কিংবা একাকীত্বের বেড়াজালে ধুঁকে ধুঁকে ভুগতে থাকে। বৃদ্ধ বয়সে শরীরের সবটুকু শক্তি হারিয়ে একজন ব্যক্তির তো খুব বেশি কিছু চাওয়ার থাকে না। সে তো শুধু সম্মানের সাথে নিজ পরিবারের সাথে মিলেমিশে থাকতে চায়। তিলতিল করে গড়ে তোলা সুখের নিবাসে আমৃত্যু থাকতে চাওয়ার বাসনা কি খুব বেশি কিছু? একটু গভীর ভাবে চিন্তা করলেই তাদের এ ইচ্ছা পূরণ করা সম্ভব। নিজ বাসা-বাড়িতে বৃদ্ধদের জন্য উপযুক্ত কাঠামোগত পরিবর্তন আর তাদের প্রতি সহিষ্ণুতা-সহযোগিতার পরিবেশ তৈরির মাধ্যমেই তাদের এ ছোট্ট ইচ্ছাটি পূরণ করা সম্ভব। #### **ভবনের সাধারণ কাঠামোগত পরিবর্তন-General structural changes in the building** সারাজীবন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রক্ত পানি করা পরিশ্রমে মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে বানানো একটি বাড়ি হয়ে উঠতে পারে কোনো ব্যক্তির আশা ভরসার শেষ স্থল। ভরসার সেই সম্বলখানিকে আঁকড়ে ধরে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে চাওয়ার ইচ্ছা নিতান্তই অমূলক নয়। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় বার্ধক্য। কর্মক্ষম সময়ে বানানো সেসব অবকাঠামোই যেন প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় বার্ধক্যে। আর তাইতো কষ্টে বানানো সেই বাড়িতে কাঠামোগত সংস্কার কিংবা শুরু থেকেই বার্ধক্যকে মাথায় রেখে বাড়ির কাঠামোগুলো তৈরি করলে আর সেসব বাধার সম্মুখীন হতে হয় না। - বৃদ্ধদের জন্য সুবিধাজনক ভবন নির্মাণের জন্য শুরুতেই তাদের চাহিদার কথা মাথায় রাখতে হবে। অর্থাৎ বৃদ্ধ ব্যক্তি কি বাড়িতে একাই থাকবেন নাকি পরিবারের আরো সদস্যদের সাথে বসবাস করবেন - সে বিষয়টি মাথায় রেখে পরবর্তীতে সামনে এগোতে হবে। বৃদ্ধ ব্যক্তি একাই বসবাস করলে তার কাজকর্মের স্বয়ংসম্পূর্ণতার প্রতি প্রাধান্য দিতে হবে। - ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাঁকা জায়গা রেখে বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা সাজাতে হবে। অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে বৃদ্ধ ব্যক্তি যদি হুইল চেয়ার ব্যবহার করেন তবে তার জন্য সুবিধাজনক হবে এরকম পরিবেশ।  - ঘরের মেঝে তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। টাইলসের তৈরি মেঝে পিচ্ছিলতা তৈরি করে অনেক সময় নানা দূর্ঘটনা ঘটাতে পারে। আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর কোনো না কোনো ভাবে পড়ে গিয়ে ৩২০০০ জন মানুষের মৃত্যু ঘটে এবং অসংখ্য মানুষ আহত হয়। তাই মেঝে তৈরির ক্ষেত্রে একটু সাবধানতাই অনেক বড় ক্ষতির হাত থেকে আমাদের বৃদ্ধদের রক্ষা করতে পারে। মেঝে তৈরির সময় অপিচ্ছিল রেখে কিংবা পরবর্তীতে মেঝেতে অপিচ্ছিল মাদুর ব্যবহার করেও এমন দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। - ঘরের দরজা তৈরির ক্ষেত্রেও বৃদ্ধদের কথা মাথায় রাখতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রশস্ততা রেখে দরজাগুলো তৈরি করতে হবে। বৃদ্ধদের হুইল চেয়ার সহ আরও আনুষঙ্গিক প্রয়োজনীয় জিনিস যাতে সহজে পারাপার করা যায় সে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। পকেট দরজার মাধ্যমে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কক্ষের সাথে বৃদ্ধদের ঘরের সংযোগ রক্ষা করাও যেতে পারে। এক্ষেত্রে কোনো দৈব দূর্ঘটনা ঘটলে সহজেই তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। দরজার গোলাকার হাতলের চেয়ে খাড়া লিভারের মতো হাতলগুলো বৃদ্ধদের জন্য বেশি সুবিধাজনক। কেননা দরজা খোলা কিংবা বন্ধ করার ক্ষেত্রে গোলাকার হাতলগুলো বেশ কিছুক্ষণ ঘুরাতে হয়। আর আর্থ্রাইটিস বা বাত ব্যথার রোগী বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে একাজটিই অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।  - বৃদ্ধদের জন্য সাধারণত বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় বসবাস করা সুবিধাজনক। কেননা এক্ষেত্রে খুব একটা নড়াচড়ার প্রয়োজন হয় না। আর এটি সম্ভব না হলে বৃদ্ধদের জন্য ইলেক্ট্রনিক সিঁড়ি কিংবা লিফটের ব্যবস্থা করা জরুরি। সাথে সিঁড়িতে হাতে ধরে ওঠার জন্য উপযুক্ত রেলিং লাগানোর ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। - ঘরে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধদের দৃষ্টিশক্তিও কমতে থাকে। তাই দৃষ্টিস্বল্পতা হেতু পড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে নানা দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। আর তাই পরিকল্পনা করে ঘরে পর্যাপ্ত আলো প্রবেশের কিংবা কৃত্রিমভাবে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা জরুরি। - বৃদ্ধ বয়সে সুষম ঘুম কিংবা বিশ্রামের দরকার। আর এজন্য ব্যক্তির বিছানাটি হওয়া উচিত যথেষ্ট আরামদায়ক। ঘরের একটি সুবিধাজনক স্থান বিছানার জন্য নির্ধারণ করা দরকার যাতে করে ব্যক্তি সহজেই বিছানার চারপাশে হাতের নাগালে দরকারি সবকিছু পেতে পারে। - বৃদ্ধদের জন্য নির্দিষ্ট ঘরে নিরবচ্ছিন্ন টেলিফোন সংযোগ কিংবা মোবাইল ফোন রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে কোনো দূর্ঘটনায় তাদের সহজেই সহযোগিতা পাওয়া সম্ভবপর হয়ে উঠতে পারে।  #### **বাথরুমের বিন্যাস-Bathroom Layout** বৃদ্ধ বয়সে ব্যক্তির সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো প্রসাব-পায়খানায় অসুবিধার সম্মুখীন হওয়া। এক্ষেত্রে কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন মাথায় রাখলে বিষয়টা অনেকাংশেই সহজ হয়ে যায়। - একটু আগেই দেখেছি যে বৃদ্ধ বয়সে ভারসাম্যহীনতার কারণে পড়ে যাওয়া অনেক বড় একটা সমস্যা। বাথরুমেও এর ব্যতিক্রম নয়। আর তাই বাথরুমে অপিচ্ছিল মাদুর ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। আর টাইলসের মেঝে অনেক ঠাণ্ডা হয়। এটি ব্যবহারে এ ঠাণ্ডার হাত থেকেও বৃদ্ধদের রক্ষা করা সম্ভব হয়। - বৃদ্ধদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভালোমতো বসতে না পারা সহ নানা সমস্যা দেখা যায়। এক্ষেত্রে তাদের কথা মাথায় রেখে বাথরুমে স্বাচ্ছন্দে ব্যবহার করা যায় এমন উচ্চতার ও আকারের কমোড ব্যবহার করা যেতে পারে। - বাথরুমে বাথটাব ব্যবহার না করে বরং নাড়াচাড়া করে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায় এমন ঝর্ণাগুলোর ব্যবহার বৃদ্ধদের জন্য অনেক উপকারী হয়। কারণ এতে পিছলে পড়ে যাওয়ার তেমন ভয়ও থাকে না আর স্বাচ্ছন্দে গোসল করা যায়। - বাথরুমের সাবান, টিস্যু,পানি সহ যাবতীয় জিনিস যাতে সহজে বৃদ্ধদের হাতের নাগালে পাওয়া যায় এমন ব্যবস্থা করতে হবে। - অনেক সময় দেখা যায় অনেকের হুইল চেয়ারে করে বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে বাথরুমে সহজে যাতে হুইলচেয়ার পরিবহন করা যায় এমন করে বাথরুমের কাঠামো ডিজাইন করতে হবে।  বিষয়গুলো অনেকটা সাদামাটা শুনালেও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এমন কয়েকটি পরিবর্তন বৃদ্ধদের জন্য অনেক উপকারী হয়ে দাঁড়াতে পারে। জীবন রক্ষা পেতে পারে অনেকের। স্বাচ্ছন্দে জীবনটাকে উপভোগ করতে পারেন তারা। #### **রান্নাঘরের বিন্যাস-Kitchen Layout** সচরাচর একা একাই থাকেন এমন বৃদ্ধদের জন্য রান্নাঘরে নিয়মিত যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। আর এতে দূর্ঘটনাও ঘটে প্রচুর। তাই রান্নাঘরেও কিছু পরিবর্তন তাদের উপকারে আসতে পারে। - রান্নাঘরের মেঝেও ভবনের অন্যান্য স্থানের মতো অপিচ্ছিল রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। - রান্নাঘরের কেবিনেটগুলোতে ড্রয়ার সিস্টেম কিংবা টান দিলেই খুলে যায় এমন কেবিনেটে রান্নার প্রয়োজনীয় বস্তু রাখা সুবিধাজনক। এতে সহজেই দ্রব্যাদি খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়। - রান্নাঘরে চুলার অবস্থান নির্ধারণে সতর্ক থাকতে হবে। অতিরিক্ত ধোঁয়া প্রতিরোধে চিমনি ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রয়োজনে ইলেক্ট্রিক চুলাও ব্যবহার করা যেতে পারে। অগ্নিনির্বাপনের যাবতীয় ব্যবস্থা হাতের নাগালে রাখলে দূর্ঘটনা পরবর্তী অনেক উপকার পাওয়া যায়।  #### **সহযোগিতা-সহমর্মিতার পরিবেশ-An environment of cooperation and compassion** বাড়িতে শুধুমাত্র কাঠামোগত পরিবর্তন আনলেই বৃদ্ধদের থাকার উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়ে যায় না। এত এত সব পরিবর্তনের মাঝে বৃদ্ধ ব্যক্তি নিজেকে যেন বৃদ্ধাশ্রমের ন্যায় ধরাবাধা পরিবেশে নিজেকে বন্দি না মনে করেন সে বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে। তিনি যে আর দশটা স্বাভাবিক পরিবেশের ন্যায় পরিবেশেই রয়েছেন সে বিষয়টি তার কাছে তুলে ধরা দরকার। তার যে নিজস্ব একটা গুরুত্ব সকলের কাছে রয়েছে এ ব্যাপারটি পরিবারের সকলের আচার আচরণে ফুটে তোলা আবশ্যক। বৃদ্ধ ব্যক্তিকে তার নিজস্ব সুবিধা অসুবিধা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশ করার স্বাধীনতা দিতে হবে। পরিবারের অনান্য সদস্যদের সাথে তিনি যেন সহজেই মিশে যেতে পারেন এমনই হওয়া উচিত। তাহলেই বৃদ্ধদের জন্য সুন্দর একটি আবাস তৈরির উদ্দেশ্য সফল হবে বলে আশা করা যায়।
Continue Reading
রান্নাঘর আমাদের ঘরের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কারণ একজন নারী তার জীবনের অনেকটা সময় রান্নাঘরে পার করে।তবে রান্নাঘরে খাবার বানাতে এখন নারীর পাশাপাশি পুরুষ এবং বাচ্চাদের সম্পৃক্ততাও বেড়েছে।ফলে ঘরের বড় সদস্যদেরকে রান্নাঘরের বিন্যাস কেমন হওয়া উচিত সে ব্যাপারে যথেষ্ট খেয়াল রাখতে হয়। মানুষ সময়ের সাথে সাথে অনেক আধুনিক প্রযুক্তি ও পন্যের ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়েছে। এমনকি রান্নাঘরকে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার ক্ষেত্রেও প্রযুক্তি ও আধুনিকতার ব্যবহার ব্যাপক হারে শুরু করেছে।যদিও আমাদের দেশের গ্রাম বা মফস্বল শহরের অনেক জায়গায়ইএখনও রান্নাঘর বাসগৃহ থেকে কিছুটা দুরেই। এসব রান্নাঘরের গঠনেও আধুনিকতার ছোঁয়া নেই।তবে বর্তমানে নতুন গৃহ নির্মান করছেন যারা তারা রান্নাঘর কে বাসগৃহের সাথেই রাখছেন এবং নতুনত্বের ছোঁয়া রাখতে চেষ্টা করছেন। রান্নাঘর প্রতিটি বাড়ির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও উষ্ণতম স্থান৷ প্রতিদিনই অসংখ্যবার ব্যবহার করা হয় রান্নাঘর। একটি বাসার রান্নাঘরের সাথে অন্যান্য রুমের কোনো তুলনা হয় না।তাই রান্নাঘরের সাজসজ্জা হওয়া উচিত খুবই পরিকল্পিত এবং সময়োপযোগী। একটি সুন্দর রান্নাঘরে গেলে মনটাও ভালো হয়ে যায়, বেড়ে যায় কাজের উদ্যম।একটি গোছানো রান্নাঘরে খাবার রাঁধতে গেলে মজাদার রান্নাও সহজে ও তাড়াতাড়ি হয়।কারন সুন্দর ও গোছানো রান্নাঘরে সব কিছু কিন্তু হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। ফলে রান্নায় সময়ও কম লাগে। একটি সাজানো গোছানো রান্নাঘর তৈরিতে দরকারি নতুন নতুন আসবাব ও জিনিসপত্র এখন বাজারে অনেক পাওয়া যাচ্ছে।যেগুলোর ব্যবহার রান্নাঘরের সৌন্দর্য্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আবার খুব বেশি আসবাপত্র,তৈজসপত্র বা রান্নার সরঞ্জাম রান্নাঘরের সৌন্দর্য্য নষ্ট করে দেয়।তাই এ ব্যাপারে প্রয়োজন সৃজনশীলতা ও দক্ষতার পরিচয় দেয়া।চলুন জেনে নিই কেমন হওয়া উচিত রান্নাঘরের সাজসজ্জা . ##### **১.রান্নাঘরের আয়তন-The size of the kitchen** একটি রান্নাঘরের আয়তন কতটুকু তার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করে।এ আয়তনের উপর নির্ভর করে রান্নাঘরের ডেকোরেশন করতে হয়। বিশেষ করে কোন সাইজের আসবাবপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র কিনতে হবে এটা রান্নাঘরের আয়তনের উপর নির্ভর করে। যেমন আপনার রান্নাঘরের আয়তন যদি কম হয় তাহলে আপনার রান্নাঘরের নকশা সমান্তরালে রাখা ভাল। কিংবা সোজাও রাখতে পারেন। তবে চারকোনা করতে গেলেই রান্নাঘরের জায়গা ভাগ হয়ে যাবে। আর তখন এটি অনেক ছোট দেখাবে। আর আপনার রান্নাঘর যদি একটু বড় আকারের হয় তাহলে ইংরেজী ‘L’ এর মত কিংবা ‘U’ এর মত নকশা করলে খুব আকর্ষণীয় দেখাবে।আর যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে এরকম একটি রান্নাঘরের জুড়ি নেই। ##### **২.পরিকল্পিত বৈদ্যুতিক সংযোগ এর ব্যবস্থা-Electricity Connection** রান্নাঘরের বিন্যাস কেমন হওয়া উচিত তা রান্নাঘর নকশা করার আগে ঠিক করে নিলে ভালো হয়।কারন এর আগে নতুন অ্যাপার্টমেন্টে বা বাড়িতে পরিকল্পিত বৈদ্যুতিক সংযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। আজকাল নতুন নতুন অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে রান্নাঘর করা হয় নকশা করে তাই যে কোনো সময় একটি বাড়ির নকশা পরিবর্তন করা যায় না। আপনি যদি বাড়ির নকশা করার সময়ই রান্নাঘরে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার কথা না ভেবে রাখেন পরবর্তীতে আপনাকে দারুন ঝামেলা পোহাতে হবে। পর্যাপ্ত আলো, বাতাস, এগজস্ট ফ্যান, ওভেন, রেফ্রিজারেটর, ইনডাকশন, ব্লেন্ডার এসব জিনিস আজকাল রান্নাঘরের নিত্য প্রয়োজনীয় সঙ্গী। এসব হোম এপ্লায়েন্সের সংযোগ এর জন্য প্রয়োজন সুন্দর ও মজবুত বৈদ্যুতিক বোর্ড ও সকেট।তাছাড়া এ ঘরটি উষ্ণ বলে এখানে পাখার ব্যবস্থা ও রান্নার ধোঁয়া,ঝাঁজ দূর করতে চিমনি বা এগজস্ট ফ্যান লাগাতে হলেও বৈদ্যুতিক সংযোগের ব্যবস্থা রাখা উচিত। ##### **৩.পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে-Natural Air**  রান্নাঘর নকশার সময় দক্ষিণ-পুর্ব দিকে এটি রাখা উচিত।আর বড় জানালা,ভেন্টিলেশনের জন্য ফাঁক রাখা উচিত।বাতাস চলাচলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকলে রান্নার গন্ধ সারা ঘরে ছড়াতে পারে না।কারন বদ্ধ রান্নাঘরের পরিবেশ স্যাঁতসেতে হয় যা রাঁধুনির স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আর এরকম জায়গায় খাবার রাখলে খাবারও বেশি ভালো থাকে না। ##### **৪.রান্নাঘরে কেমন রং হলে ভালো হয়-Kitchen Color**  রান্নাঘরের বিন্যাস কেমন হওয়া উচিত সে প্রশ্নের উত্তরে সবচেয়ে আগে আসে রান্নাঘরের দেয়ালে রং এর ব্যবহার।রান্নাঘর আসবাবপত্র ও তৈজসপত্র দিয়ে সাজিয়ে ফেললে তখন রান্নাঘরের দেয়াল রং করা কঠিন হয়ে যায়। নতুন অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে এরকম সমস্যা কম হয়,তবে যারা নতুন করে পুরনো রান্নাঘর সাজাতে চাচ্ছেন তাদেরকে সব আসবাব ও তৈজসপত্র সরিয়ে রং করতে হবে। কি রং করবেন সে ব্যাপারে অনেক পরামর্শ রয়েছে।কালো বাদ দিয়ে সব রংকেই রান্নাঘরের দেয়াল সাজানোর জন্য ব্যবহার করা যায়।রান্নাঘরে ধবধবে সাদা রং করলে স্নিগ্ধতার প্রকাশ ঘটে।তবে ধোঁয়া ও তেল,মশলার ঝাঁজে সাদা রং বেশিদিন তার স্নিগ্ধতা ধরে রাখতে পারে না।তবে সাদার আবার বিভিন্ন রকম যেমন চাপা সাদা,ডিমের খোসার সাদা রং,ধূসর সাদা,ঘিয়া ও ক্রিম রঙের ব্যবহারও বেশ চলছে। আবার ভিন্নতা আনতে গোলাপি ও সবুজের মিশেল ব্যবহার করে দেখতে পারেন।এক্ষেত্রে দেয়াল হবে গোলাপি আর এর বৈপরীত্যে দরজা ও জানালায় সবুজ রং থাকলে খুব মানাবে।বর্তমানে নতুন আরও রং এর কম্বিনেশন দেখা যাচ্ছে। সেটি হল দেয়াল ও ছাদে আকাশি নীল রং ব্যবহার করে এর সাথে সাদা রং এর আসবাবপত্র রাখলে বেশ ফুটে ওঠে।এরকমই আরও কম্বিনেশনের রং হল দেয়াল ও ছাদ হালকা হলুদ সাথে ধূসর রঙের আসবাবপত্র। অবশ্য রান্নাঘরের চার দেয়ালের বিপরীত দেয়ালে দুই রঙের ব্যবহারও নতুনত্ব আনবে। টকটকে লাল, হলুদ বা নীল অনেকেই পছন্দ করেন না।তবে রান্নাঘরের ছাদে সাদা রঙের সাথে দেয়ালে হালকা লাল,আকাশ নীল বা হালকা সবুজের ব্যবহার অন্যরকম পরিবর্তন আনবে।বিভিন্ন দেয়ালে কয়েকটি রঙের ব্যবহার বা হালকা একটি রঙের ব্যবহার সাথে এক রঙা কেবিনেট,ড্রয়ার ও অন্যান্য আসবাব ব্যবহারে মন ভরে যাবে।যা আপনার ক্লান্তি দূর করে রান্নায় আরও বেশি আগ্রহী করে তুলবে।আর রান্নাঘরের এমন পরিবর্তন আপনার আভিজাত্যও ফুটিয়ে তোলে। ##### **৫.ড্রয়ার,কেবিনেট ও তাকের ব্যবস্থা রাখা-All necessary things**  একটি পরিকল্পিত রান্নাঘরের অন্যতম আসবাব হল এখানে কাঠ,কাঠের বিকল্প পার্টেক্স বা মেলামাইন বোর্ড বা ধাতুর তৈরি ড্রয়ার,কেবিনেট ও তাকের ব্যবস্থা রাখা।এটি রান্নাঘরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। আর এই আসবাবগুলো উপরের দিকে স্থাপন ও বাড়ানো যায়।ফলে জায়গার অপচয় হয় কম।আর রাঁধুনিরা চায় না তার রান্নাঘরের জিনিসগুলো এলোমেলো হয়ে থাকুক। প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো প্রয়োজনের সময় হাতের কাছে খুঁজে পেতে তাক,কেবিনেটের ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে গেছে।কখন কোন জিনিস টা কোথায় পাওয়া যাবে সে বিষয়ে ড্রয়ার বা কেবিনেট এর গুরুত্ব বলে বোঝানো সম্ভব না।এসব আসবাবপত্র স্থাপনের মাধ্যমে বুঝা যায় রান্নাঘরের বিন্যাস কেমন হওয়া উচিত। ##### **৬. রান্নাঘরের মেঝে ও দেয়ালে লাগানোর অনুষঙ্গ-Kitchen walls and other instrument**  রান্নাঘরের দেয়ালে বা মেঝেতে বা দু জায়গাতেই টাইলস এর ব্যবহার খুব জনপ্রিয়। এর ফলে রান্নাঘরে দাগ, ময়লা তেমন সৃষ্টি হয় না কারন টাইলসের উপর লেগে থাকা তেল,মশলা বা অন্য কিছুর দাগ ও রং সামান্য মুছলেই উঠে যায়।বর্তমানে টাইলসের ডিজাইন ও আকারে ব্যাপক পরিবর্তন ও নতুনত্ব এসেছে।রান্নাঘরের জন্য তৈরি করা হচ্ছে আলাদা ডিজাইন ও শেডের টাইলস।যা রান্নাঘরের আভিজাত্য ফুটিয়ে তোলে।এছাড়াও এখন নতুন আবিষ্কার হচ্ছে অস্থায়ী স্টিকার ওয়ালপেপার।এগুলো কিন্ত আপনি নিজেও লাগাতে পারেন কাগজের মত কোন কারিগর ছাড়াই।এগুলো দেখতে যেমন সুন্দর তেমন পরিষ্কার করাও সহজ। ##### **৭.রান্নাঘরের সিংক-Kitchen Sink**  রান্নাঘরের বিন্যাস কেমন হওয়া উচিত এমন ভাবনায় আমরা আরেকটি জরুরি জিনিসের কথা বলছি।রান্নাঘরের ধোয়া মোছার সব কাজটি যেখানে করা হয় সে জিনিসটার নাম সিংক ।দিন বদলের সাথে সাথে সিংকের ডিজাইন ও ধরনেও পরিবর্তন এসেছে।ডাবল সিংক বা সিংগেল সিংক,আবার চাইলে কেউ সিংকের পরিবর্তে ভিন্ন শেপের সিরামিক বেসিনও ব্যবহার করে থাকেন।সিংক সাধারণত স্টেইনলেস স্টিলের হয়ে থাকে। বাজারে নতুন নতুন নকশার সিংক রয়েছে যা ব্যবহার করে আপনার ধোয়া ও পরিষ্কারের কাজ খুব সহজে সারতে পারেন।এছাড়া এসব সিংকে যুক্ত থাকে দুটো পানির কল বা দুটো হাতলযুক্ত একটি কল যার একটি গিজারের সাথে যুক্ত থেকে গরম পানি সরবরাহ করে এবং অপরটি ঠান্ডা পানি। ##### **৮. রান্নাঘরে হোম এপ্লায়েন্স রাখার স্থান-Home appliances in the kitchen** রান্নাঘরের বিন্যাস কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ের সাথে হোম এপ্লায়েন্সগুলো রাখার উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করার বিষয়টিও সম্পর্কিত।কারণ রান্না করতে আজকাল বৈদ্যুতিক বিভিন্ন যন্ত্রের ব্যবহারে রান্না হয়েছে সহজ ও তাড়াতাড়ি। মশলা বাটা, খাবার গরম করা,দ্রুত খাবার সিদ্ধ করা,রুটি বানানো,বেকিং এর জন্য নানা ধরনের যন্ত্রপাতি আজ রান্নার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। আর এসব যন্ত্র যেহেতু রান্না করতেই দরকার হয় তাই এগুলো রাখার জায়গাটা রান্নাঘরেই রাখতে হয়।কেবিনেট,ড্রয়ার, কুকিং টপ বা চুলার পাশে,আলাদা র ্যাকের উপরে এসব হোম এপ্লায়েন্স রাখলে গৃহিনীর সুবিধা হয়। ##### **৯. চুলা,ফ্রিজ ও তৈজসপত্র কোথায় রাখব-Where to keep the stove, fridge and utensils**  রান্না করতে সবচেয়ে দরকারি জিনিস হল চুলা।চুলায় খাদ্য উপকরণ কে তাপ দিয়ে খাওয়ার উপযোগী করে তোলাকে রান্না বলি আমরা।আধুনিক সুসজ্জিত রান্নাঘরে গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক চুলায়ই রান্না করা হয়ে থাকে।তবে কাঠ ও বিকল্প জ্বালানি দিয়ে মাটি বা সিমেন্টের তৈরি চুলায় গ্রাম,মফস্বল শহর ও খোলা জায়গায় রান্না হয়ে থাকে।বর্তমানপ বাজারে কাচ বা স্টেইনলেস স্টীলের গ্যাসের চুলা বা বার্নার পাওয়া যায় যা দেখতে খুব আকর্ষণীয় এবং সহজে পরিষ্কার করা যায়।  আর খাদ্য সংরক্ষণে ফ্রিজ হল অন্যতম উপাদান যা রান্নাঘর বা রান্নাঘরের বাইরে কাছাকাছি অবস্থানে রাখা হয়।ফ্রিজ চালাতে বিদ্যুৎ সংযোগ ও বাতাস চলাচল প্রয়োজন তাই এটিকে রান্নাঘরের এরকম জায়গায় রাখলে ভালো হয় যেখানে বাতাস চলাচল আছে এবং বৈদ্যুতিক বোর্ডের সংযোগ আছে।সুন্দর ফুলেল প্রিন্ট, দুই দরজার এবং বেশি উচ্চতার ফ্রিজের চাহিদা এখন বাজারে প্রচুর। যা রান্নাঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করে।রান্নাঘরের তৈজসপত্র যেমন হাড়ি-পাতিল,কড়াই- খুন্তি,ফ্রাইংপ্যান,তাওয়া,থালাবাটি,ছুরি,দা,বটি,শীল-নোড়া,মশলার কৌটা,বালতি,গামলা ইত্যাদির ব্যবহার যখন তখন হয়ে থাকে।তাই এগুলো পরিষ্কার করে কেবিনেটে ঢুকিয়ে রাখলে সবচেয়ে ভালো হয়।কারণ এগুলো আকারে ছোট হওয়ায় একজায়গায় গুছিয়ে রাখা যায় না।এগুলোকে ড্রয়ার,তাক ও কেবিনেটে গুছিয়ে রাখলে ভালো হয়। ##### **১০. রান্নাঘরের বিন্যাসে আরও কিছু জিনিসের নাম ও ব্যবহার-Other things** রান্নাঘরের বিন্যাস কেমন হওয়া উচিত এমন প্রশ্নের উত্তরে আরও কিছু তথ্য দিচ্ছি।উপরে যেসব জিনিসের কথা বলেছি সেগুলো ছাড়াও আরও কতগুলো ছোট ছোট জিনিসের ব্যবহারে রান্নাঘরের সাজসজ্জা বেড়ে যাবে। রান্নাঘরের দরজা ও জানালা যদি গ্লাসের হয়ে থাকে তো সেখানে প্লেইন গ্লাসের পরিবর্তে বিভিন্ন রঙিন গ্লাস ব্যবহার করা যায়। এতে অল্পতেই সুন্দর একটা পরিবর্তন আসে। দরজায় সুন্দর প্রিন্টের পর্দার ব্যবহার করা যেতে পারে।আয়তনে বড় রান্নাঘরে ডাইনিং টেবিল বা ছোট গোল টেবিল ও চেয়ার রাখলে ঘরের সবাই রান্নাঘরেই খাওয়ার কাজটা সেরে ফেলতে পারে।এতে গৃহিণীর সময় বাঁচে ও ঝামেলা কমে।  রান্নাঘরে তৈজসপত্র বেশি হয়ে গেলে তা যদি কেবিনেটে রাখার জায়গা না থাকে তবে রান্নাঘরের ফাঁকা দেয়ালে হুক লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখা যায়।যেমন ছুরি,চামচ,খুন্তি ইত্যাদি।এছাড়া ঝুলন্ত তাক দেয়ালে স্থাপন করে অগোছালো থালাবাটি,কৌটা গুছিয়ে রাখা যায়। কাপড়,তোয়ালে,মোছামুছির ন্যাকড়া ইত্যাদি সাজিয়ে রাখতে দেয়ালে স্টীলের স্ট্যান্ড সেট করা যেতে পারে।এছাড়া পলি ব্যাগ,কাগজের ঠোঙা,শপিং ব্যাগ বা বাজারের ব্যাগ ভাজ করে বড় ও সুন্দর দেখতে একটি ব্যাগে ভরে দরজার পিছনে অস্থায়ী হুকে ঝুলিয়ে রাখলে ভালো হয়। রান্নাঘরের সৌন্দর্য্য বাড়াতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হল যেকোন ছোট গাছ বা ফুলের টব রাখা।এটি একদিকে যেমন আমাদেরকে সবুজ প্রকৃতির ছোঁয়া এনে দেয় তেমনি রান্নাঘরে অক্সিজেন সরবরাহে সামান্য হলেও সাহায্য করে। ##### **পরিশেষ কথা-Conclusion** রান্নাঘরের সাজসজ্জা বাড়াতে সবচেয়ে বেশি দরকার সুন্দর পরিকল্পনা ও বুদ্ধির ব্যবহার।কারন রান্নাঘরের সাজসজ্জায় এখন যেসব আসবাবপত্র ও অন্যান্য জিনিসের ব্যবহার শুরু হয়েছে তা বেশিরভাগই ব্যয়সাপেক্ষ।অনেকে চাইলেও এসব পুরো ডেকোরেটিভ জিনিস কিনে রান্নাঘরের সাজসজ্জা সম্পুর্ন করতে পারে না।তাহলে কি এর অভাবে রান্নাঘরের সাজ অপুর্ন থেকে যায়? তা কিন্তু নয়।প্রত্যেকেই তার বাজেট বুঝে চলবে।অবশ্য সব বাজেটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আজকাল অনেক ইন্টেরিয়র কোম্পানি রান্নাঘর সাজিয়ে দিচ্ছে। দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে কম বেশি সব দামের জিনিস।রান্নাঘরের বিন্যাস কেমন হওয়া উচিত সে প্রশ্নের উত্তর নিশ্চয়ই এখন পুরোপুরি পেয়ে গেছেন।
Continue Reading